রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরু ডিসেম্বরে

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত

সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত হলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের মধ্যে একটি চলতি ডিসেম্বরে চালু হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করা হচ্ছে।

পূর্ব নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই বছর বাড়িয়ে সেটি ২০২৭ সাল পর্যন্ত পৌঁছাবে।

গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জয়েন্ট কো-অরডিনেশন কমিটির এক সভায় বৈশ্বিক ও স্থানীয় নানা প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়।

প্রকল্প সূত্র ও আনবিক শক্তি কমিশন সূত্র জানায়, রূপপুর প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ধীরগতি, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পের কাজে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে।

এছাড়া সময়মতো প্রকল্পের কাজ শুরু করতে না পারায়ও প্রকল্পের কাজ শেষ হতে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রকল্প মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

তবে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি হলেও এতে প্রকল্প ব্যয়ের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এটি একটি টার্ন-কি প্রজেক্ট। ফলে প্রকল্প মেয়াদ বাড়লেও প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে না।

পদ্মা নদী তীরবর্তী পাবনার রূপপুরে রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ভিভিইআর প্রযুক্তির দুটি পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন করা হচ্ছে। ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে রাশিয়ার সহজ শর্তে ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণ রয়েছে।

রূপপুর প্রকল্পের নব নিযুক্ত প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ড. মো. জাহেদুল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলেও প্রকল্পের নির্ধারিত কর্ম সম্পাদনের সব দিনক্ষণ এই মুহূর্তে নিশ্চিত করা হয়নি। তবে পূর্ব নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী প্রকল্প সম্পাদনের যে সময় নির্ধারিত ছিল এখন তার সাথে দুই বছর যোগ করে নতুন করে দিনক্ষণ ঠিক করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের মধ্য দিয়ে রূপপুর প্রকল্পের মূল পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। পরবর্তী বছর ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী দুটি ইউনিটের কংক্রিট ঢালাই কাজের উদ্বোধন করেন।

প্রকল্পের পূর্ব নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রথম ইউনিটের এবং ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। শিডিউল অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১৩ অক্টোবর প্রথম ইউনিট আর ২০২৫ সালের ১৭ অক্টোবর দ্বিতীয় ইউনিটের চূড়ান্ত হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

তবে শিডিউল অনুযায়ী কাজ এগুতে না পারায় দুই বছর পিছিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরু করার ব্যাপারে আশাবাদী প্রকল্প কর্মকর্তারা।

রূপপুর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. জাহিদুল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রথম ইউনিটের জন্য তিনটি সঞ্চালন লাইনের কাজ চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরু হবে।'

এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

ইতোমধ্যে প্রথম ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) প্রকল্প এলাকায় এসে পৌঁছেছে। ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের জ্বালানি হস্তান্তর হয়।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, ইতোমধ্যে জ্বালানির ইন্সপেকশন সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের জন্য জ্বালানি লোড করার পূর্বে আইএইএর মিশন খুব শিগগিরই প্রকল্প এলাকায় আসবেন। সব প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করবেন। আইএইএর সার্টিফিকেট পাওয়ার পর পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহারের লাইসেন্স পাওয়া যাবে। ডিসেম্বরের আগেই এ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর জ্বালানি লোড করে এ বছরের ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিট চালু করা হবে বলে জানান তিনি।

আইএইএর মিশনকে সামনে রেখে আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

রূপপুর প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার জন্য ৬০ কিলোমিটার রূপপুর-বাঘাবাড়ি লাইন, ১০২ কিলোমিটার রূপপুর-বগুড়া লাইন এবং ১৪৪ কিলোমিটার রূপপুর-গোপালগঞ্জ লাইন প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে রূপপুর-গোপালগঞ্জ লাইন চালু করতে হলে ২ কিলোমিটার পদ্মা নদী পারাপারের লাইন নির্মাণ করতে হবে।

আর দ্বিতীয় ইউনিট চালু করতে হলে ১৪৭ কিলোমিটার রূপপুর-ঢাকা বিদ্যুৎ লাইন চালু করতে হবে, যার মধ্যে বৃহত্তম ১৪ কিলোমিটার যমুনা নদী পারাপারের কাজ রয়েছে।

বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি) বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজ করছে। পিজিসিবির প্রকৌশলী ও নদী পারাপার লাইনের প্রকল্প পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ইতোমধ্যে স্থলভাগের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হবে।

দেলোয়ার বলেন, নদী পারাপারের লাইন নির্মাণের জন্য টাওয়ার স্থাপনের কাজ নদীতে অনেক ঝুঁকি নিয়ে করতে হয়। এজন্য বিদেশ থেকে একটি বিশেষ হ্যামার নিয়ে আসতে হয়েছে। সময়মতো সব যন্ত্রপাতি না পাওয়ায় কাজ কিছুটা দেরি হলেও পদ্মা নদী পারাপারের কাজ ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ আগামী অক্টোবরের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানান তিনি।

পদ্মা নদীর কাজ শেষ হওয়ার পর আগামী বছরে (২০২৫ সালে) দ্বিতীয় ইউনিট চালু করার পূর্বেই যমুনা নদী পারাপারের কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।

সঞ্চালন লাইনের জন্য রূপপুর প্রকল্পের উৎপাদন শুরু হতে দেরি হবে না বলেও জানান তিনি।

এদিকে রূপপুর প্রকল্পের প্রথম প্রকল্প পরিচালক, বর্তমানে বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. শওকত আকবর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সঞ্চালন লাইন হস্তান্তরের আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।

শুধু সঞ্চালন লাইন নয়, বরং প্রকল্পের শুরুর কাজে কিছুটা বিলম্ব হয় ফলে শুরুতেই পিছিয়ে যায় নির্ধারিত সময়ের শিডিউল।

পাশাপাশি রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনার কারণে প্রকল্পের কাজে কিছুটা ভাটা পড়ে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই রূপপুর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আর্থিক ঝুঁকি রোধ করতে এ ধরনের প্রকল্প পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে শেষ করা উচিত। প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের দক্ষতার ঘাটতি বলে মনে করা হতে পারে, ফলে প্রকল্প সম্পাদনে শিডিউল অনুযায়ী কাজ শেষ করার তাগিদ থাকা প্রয়োজন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, এ ধরনের প্রকল্প পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত লেগে গেছে। 

রূপপুর প্রকল্প পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ প্রকল্প, এটি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও জলবায়ুর উন্নয়নে গেম চেঞ্জারের ভূমিকা রাখবে বলে জানান মন্ত্রী।

Comments

The Daily Star  | English
honor smartphone inside

How to build a smartphone

Smartphones feel inevitable in the hand, yet each one begins as a set of drawings, components and hypotheses. The journey from concept to finished device is a carefully sequenced collaboration between design labs, supplier networks and high-throughput assembly lines. In leading electronics hubs across Asia, that journey can take as little as days once a design is frozen and parts are on site.

2h ago