সব ধরনের যানবাহনের জন্য গতিসীমা নির্ধারণ

এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেট কার, বাস ও মিনিবাসের গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার, মোটরসাইকেল ৬০ কিলোমিটার এবং ট্রাক চলবে ৫০ কিলোমিটার গতিতে।

সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং জেলা শহরের মধ্যে মোটরসাইকেল ও ট্রাক ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। অন্যান্য যানবাহনের জন্য এই গতিসীমা ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার।

যদি কেউ গতিসীমা লঙ্ঘন করে তার বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন অমান্যকারীকে তিন মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে।

এগুলো হচ্ছে মোটর ভেহিক্যাল স্পিড লিমিট গাইডলাইন-২০২৪ এর কয়েকটি ধারা। যা সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে বিআরটিএ প্রথমবারের মতো জারি করেছে।

গত রোববার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এ বিধিমালা অনুমোদন করেছে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার গতকাল রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বিভিন্ন ধরনের সড়ক ও যানবাহনের জন্য বিভিন্ন গতির সীমা নির্ধারণকারী এই বিধিমালা আজ থেকে কার্যকর হবে।

দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে বড় কারণ হিসেবে বিবেচনা হলেও মহাসড়ক ও সড়কে যানবাহনের গতিসীমার কোনো দিকনির্দেশনা ছিল না।

রাস্তা নির্মাণকারী বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, একই ধরনের রাস্তার জন্য ভিন্ন ভিন্ন গতিসীমা নির্ধারণ করে, ফলে চালকেরা বিভ্রান্ত হন।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দেশের সড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী দ্রুতগামী যানবাহনের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এতে সড়ক দুর্ঘটনাও বেড়েছে।

২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর আওতায় বিআরটিএ এ বিধিমালা তৈরি করেছে, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)।

গতি সীমা

গাইডলাইন অনুযায়ী, এক্সপ্রেসওয়েতে বাস, মিনিবাস, কার, এসইউভি, মাইক্রোবাস এবং অন্যান্য হালকা যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার।

ট্রাক, ছোট ট্রাক এবং অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনের ক্ষেত্রে এই সীমা হবে ৫০ কিলোমিটার এবং বাইকের ক্ষেত্রে ৬০ কিলোমিটার এবং আর্টিকুলেটেড লরির ক্ষেত্রে হবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এক্সপ্রেসওয়ে ও জাতীয় সড়কে তিন চাকার যান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না।

জাতীয় মহাসড়কে (ক্যাটাগরি এ) প্রাইভেটকার, এসইউভি, মাইক্রোবাস, বাস, মিনিবাসসহ অন্যান্য হালকা যানবাহন সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারবে এবং ট্রাক, বাইক এবং আর্টিকুলেটেড লরির জন্য সীমা হবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার।

জাতীয় সড়কে (ক্যাটাগরি বি) গাড়ি, বাস ও মিনিবাসের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার, বাইকের জন্য ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার এবং ট্রাক ও আর্টিকুলেটেড লরির জন্য ৪৫ কিলোমিটার।

জেলা সড়কে গাড়ি, বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার, বাইক ৫০ কিলোমিটার এবং ট্রাক ও আর্টিকুলেটেড লরির ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার গতি নির্ধারণ করা হয়েছে।

সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও জেলা শহরের ভেতরের রাস্তায় গাড়ি, বাস ও মিনিবাসের গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার এবং ট্রাক, মোটরসাইকেল ও আর্টিকুলেটেড লরিতে গতিসীমা থাকবে ৩০ কিলোমিটার।

গাইডলাইনে উপজেলা ও গ্রামের রাস্তার গতিসীমাও নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাজার ও আবাসিক এলাকার কাছাকাছি গতিসীমা নির্ধারণ করে দেবে। তবে জাতীয় সড়কে ৪০ কিলোমিটার এবং আঞ্চলিক মহাসড়কে ৩০ কিলোমিটারের বেশি হবে না।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এই নিয়ম অ্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি পরিষেবা দেওয়া যানবাহনের জন্য প্রযোজ্য হবে না।

বাস্তবায়ন

সরকার ২০১৫ সালের আগস্টে ২২টি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ করলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি।

সারাদেশে গতিসীমা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে জানতে চাইলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর বলেন, সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো সড়কের পাশে গতিসীমা সম্বলিত প্রয়োজনীয় রোড সাইন স্থাপন করবে।

আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব চালক, সড়ক ব্যবহারকারীসহ সবার।

Comments

The Daily Star  | English
justice system

Can justice be dispensed in an unjust manner?

We must never forget for a moment that rule of law must be practised in its totality, and not through convenient segments.

19h ago