একমণ ধানে এক কেজি গরুর মাংস

শ্রীপুর ধান বাজারে কেনাকাটা চলছে। ছবি: স্টার

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। তবে কষ্টার্জিত সেই ধান বিক্রি করতে গিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন তারা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিমণ ধান উৎপাদনে তাদের খরচ হয়েছে প্রায় ৮০০-১০০০ টাকা। কিন্তু বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকায়। এতে উৎপাদন খরচও উঠছে না।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কৃষক আনিসুজ্জামান সোহেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ১৬-১৮ মণ ধান হয়। এক বিঘা জমিতে বীজ, চারা, চাষ, মই, রোপণ, ওষুধ, বিদ্যুৎ বিল, কাটা ও ঘরে তোলাসহ খরচ পড়ে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। ৮০০ টাকায় বিক্রি করলে ১৬ মণ ধানের দাম পাওয়া যায় ১২ হাজার ৮০০ টাকা। এতে আমাদের লোকসান হয় প্রায় তিন হাজার ২০০ টাকা।'

শ্রীপুর উপজেলার আরেক কৃষক কামাল মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধান চাষ করে লাভ নেই। সরকার দাম ঠিক করেছে কত, আর বর্তমান বাজারদর কত! আমি এক মণ ধান বিক্রি করে যে টাকা পেয়েছি, তা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনতে পেরেছি শুধু।'

ছবি: স্টার

যদিও সরকার নির্ধারিত ধানের বাজারমূল্য মণপ্রতি এক হাজার ২৮০ টাকা।

এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আসমা উল হোসনা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধানের সরকার নির্ধারিত মূল্য ৩২ টাকা কেজি। এটা কৃষকদের বলতে হবে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়টি আমরা কৃষকদের বুঝানোর চেষ্টা করছি। যাতে কৃষকরা আমাদের সঙ্গে তালিকাভুক্ত হয়। এতে কৃষকদের উপকার হবে।'

বাজারে প্রতিমণ ধান ৮০০ টাকায় বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, 'বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ ব্যাপারে খোঁজ নেব।'

সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার শ্রীপুর ধান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ধানের বাজারদর কম। তাই কৃষকরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বস্তা ভর্তি ধান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। অবশেষে আক্ষেপ নিয়েই কম দামে ধান বিক্রি করে বাড়ি ফিরছেন।  

উপজেলার বাওনি গ্রামের কৃষক আবদুল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাঁচ মণ ধান চার হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। ধানের দাম একেবারে কম। দাম আরও বাড়ানো উচিত।'

তিনি বলেন, 'এখানে একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে ধানের দাম কম না বেশি হবে।'

একই বাজারে আরেক কৃষক এবাদুল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জমিতে ধান বিক্রি করাই ভালো ছিল। দাম বলেছিল ১০০০ টাকা মণ।'

ছবি: স্টার

ভাংনাহাটি গ্রামের মফিজ মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আটাশ জাতের ধান বিক্রি করার চেষ্টা করছি। সকালে ব্যাপারী ৯০০ টাকা দর বলেছিল। বিকেল হয়ে গেছে এখনো একই দাম। এমন হলে অন্য বাজারে নিয়ে দেখব দাম বেশি পাই কিনা।'

শ্রীপুর পৌরসভার বৈরাগিরচালা গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছয় বিঘা জমিতে ধান হয়েছে ১০০ মণ। পরিবারের জন্য ৬০ মণ ধান রেখে বাকি ৪০ মণ বাজারে বিক্রি করে দিয়েছি। গত বাজারে বিক্রি করেছি এক হাজার টাকা মণ। এ সপ্তাহে দাম কমে গেছে মণপ্রতি ২০০ টাকা। আজ বাজারে এসে দেখি প্রায় সব ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায় এবং ভালো মানেরটা ৯০০ টাকায়।'

ধান ব্যবসায়ী মোস্তফা মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি বরমী বাজারের একটি মিলে ধান বিক্রি করি। এবার আমি কৃষকদের কাছ থেকে ৮০০ টাকা দরে ১০০ মণ ধান কিনেছি।'

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গাজীপুরের সহকারী পরিচালক শরীফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধানের দাম উঠানামার বিষয়গুলো আমরা দেখি না।'

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজারে ধানের দাম কম। এজন্য সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধানের দাম পেতে আমরা উপসহকারী কৃষি অফিসারের মাধ্যমে কৃষকদের অবহিত করছি, যাতে তারা অ্যাপে আবেদন করে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেন।'

'ইতোমধ্যে খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাইকিং করা হচ্ছে। কৃষকদের উপজেলা খাদ্য অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। তবে কৃষকদের অবশ্যই অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে', বলেন তিনি।

কৃষকরা অ্যাপ বুঝবে কিনা জানতে চাইলে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, 'এটা এ বছরই প্রথম না। গত বছরও ছিল। কৃষকদের আমরা বুঝিয়ে দিচ্ছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Private investment sinks to five-year low

Private investment as a percentage of the gross domestic product has slumped to its lowest level in five years, stoking fears over waning business confidence and a slowdown in job creation.

10h ago