তিন সমন্বয়কের খোঁজে ডিবি কার্যালয়ে ১২ শিক্ষক, দেখা করলেন না হারুন

শনিবার বিকেল ৪টায় ডিবি কার্যালয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ১২ জনের প্রতিনিধিদল। ছবি: ইব্রাহিম খলিল ইবু/স্টার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারের খোঁজ নিতে ডিবি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ১২ শিক্ষকের একটি প্রতিনিধিদল।

তবে 'ব্যস্ততার কারণে' তাদের সঙ্গে দেখা করেননি ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা শাখার প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

আজ শনিবার বিকেল ৪টায় ডিবি কার্যালয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ১২ জনের প্রতিনিধিদল। সেখানে ২০ মিনিটের মতো তারা অবস্থান করেন। পরে সেখান থেকে ফিরে যান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে সাদাপোশাকে তুলে নেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে তাদেরকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে উদ্বিগ্ন হয়ে আমরা সেখানে যাই। মিডিয়া থেকে আমরা জেনেছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন ছাত্রকে হাসপাতাল থেকে "অধিকতর নিরাপত্তার" জন্য এখানে নিয়ে এসেছে। হাসপাতাল থেকে কেন এখানে আনা হলো সেই খবর নিতেই আমরা এসেছি, একদমই স্বতস্ফুর্তভাবে আমরা খবর পেয়ে চলে এসেছি।'

অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'আমরা যখন এখানে এসেছি তখন এখানকার অফিস প্রধান (ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ) ভেতরেই ছিলেন, তাকে খবরও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। যদিও আমাদেরকে অফিসের ভেতর থেকে বলা হয়েছিল উনার গাড়ি থামিয়ে কথা বলতে।

'আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আমরা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকও বটে, কাজেই আমাদের শিক্ষার্থীরা ঠিকভাবে আছে কি না সেই খবর আমরা কারো গাড়ি আটকে জিজ্ঞেস করব কেন? এটা তো খুবই স্বাভাবিক যে পুরো বিষয়টা স্বচ্ছ থাকবে। কেন, কী হয়েছে আমাদেরকে বলা হবে। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলেননি।'

ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার বলেন, 'ছাত্রদেরকে নিরাপত্তার কথা বলে তুলে আনা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে ডিবি হেফাজতে কেন? পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিলো না কেন? একজন মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হচ্ছে তার পরিবার। নিরাপত্তা যদি দিতে হয় তাহলে তার বাসার আশেপাশে নিরাপত্তা দেওয়া হোক, তার পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়া হোক।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তাদেরকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এভাবে হেফাজতে নেওয়া যায় কি না সেটা একটা প্রশ্ন। তারা এখন কোথায় আছে সেটা আমাদের শিক্ষকদের জানার অধিকার আছে। এটা জনগণের কাছে দায়বদ্ধতারও বিষয়। তাই সরকারের উচিত এটা খোলাসা করা।'

এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, 'তারা আমাদের শিক্ষার্থী। তাদের চিকিৎসা থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়েই আমরা উদ্বিগ্ন। এটা আমাদের দায়িত্ব। সে কারণেই আমরা খোঁজ নিতে এসেছি। নিরাপত্তার অভাব হলে আমাদের জিম্মায়ও দিতে পারতেন। আমাদের দাবি হলো, শিক্ষার্থীদের নিরাপদে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। সেখানেও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'তিনি (ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ) তো আমাদের সঙ্গে দেখাই করলেন না! এটা অত্যন্ত অভদ্রতাসূচক কাজ হয়েছে বলে আমি মনে করি। এখানে আমরা ১২ জন শিক্ষক এসে দাঁড়িয়ে আছি, তার দেখা করার সময় হলো না। সেটা তিনি ভদ্রভাবে আমাদের জানাতেও পারলেন না, এটা ঠিক হয়নি।'

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক থেকে ১২ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিমউদ্দীন খান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজলী শেহরীন ইসলাম।

এছাড়া আরও ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা ও অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অরণি সেমন্তী খান, ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সাইমুম রেজা, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষক অলিউর সান ও ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার শিক্ষক তামারা মাকসুদ।

 

Comments

The Daily Star  | English

Govt allows 1,200 tonnes of hilsa export to India

The fish will be sent to the neighbouring country for Durga Puja

33m ago