গুলিবিদ্ধ মানিককে হাসপাতালে দেখভাল করছে অন্য রোগীর স্বজন

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ মানিক। ছবি: স্টার

গত ৫ আগস্ট সাভারের মুক্তির মোড় এলাকায় বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন মানিক মিয়া (৩৫)। পেশায় লেগুনাচালক মানিককে নেওয়া হয় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এনাম মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা হয় চিকিৎসাধীন মানিকের।

সেখানে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ মানিকের সঙ্গে নেই তার কোনো স্বজন। গুলিবিদ্ধ অন্যান্য রোগীর স্বজনরা দেখাশোনা করছেন মানিকের।

তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার সদর থানার যোগিগ্রামে। 

মানিক জানান, সাভার-আব্দুল্লাহপুর রুটে লেগুনা চালাতেন তিনি। গত ৫ আগস্ট সাভারে গিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'সেদিন সাভার বাসস্ট্যান্ড ও থানা স্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে আমাদের সঙ্গে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের অনেকে মারাও গেছে।'

তিনি বলেন, 'বিকেল ৫টার দিকে বিজয় মিছিল নিয়ে সাভার থানার দিকে যাচ্ছিলাম। সেসময় একটি বিল্ডিংয়ের উপর থেকে গুলি ছোঁড়া হয় আমাদের ওপর। আমার বাম পায়ে গুলি লেগে হাটুর নিচের অংশ ভেঙে যায়। তারপর আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।'

মানিক জানান, ছোটবেলায় তার মা-বাবা দুজন মারা গেছেন। বড় হয়েছেন নানির কাছে। নানি মারা গেলে ঢাকায় এসে লেগুনার হেলপারের কাজ নেন। একটি বিয়েও করেছিলেন। কিন্তু সেই স্ত্রী এখন আর তার সঙ্গে থাকেন না।

মানিক বলেন, 'আমার কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই, তেমন টাকা-পয়সাও নেই। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আমার দেখাশোনা করছেন অন্য রোগীর স্বজনরা।'

'কাজ না করতে পারলে না খেয়ে মরতে হবে। পা ভালো না হলে কাজ করব কীভাবে, এই চিন্তাই এখন করি। আন্দোলন সফল হয়েছে, এটাই খুশির বিষয়,' বলেন তিনি।

মানিক জানান, কিছু শিক্ষার্থী এসে তার জন্য কিছু টাকা দিয়ে গেছে। আগে তার সঙ্গে কাজ করেছেন এমন কয়েকজন এসে লুঙ্গি-গামছা দিয়ে গেছে। খাবার হাসপাতাল থেকে দিচ্ছে। 

হাসপাতাল তার কাছ থেকে চিকিৎসার খরচ রাখছে না বলেও জানান।

'ভবিষ্যতে পা ভালো হলে আবারও গাড়ি চালাবো,' বলেন মানিক। 

জানতে চাইলে এনাম মেডিকেলের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গুলিতে মানিকের পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পায়ে অপারেশন করা হয়েছে। সুস্থ হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।'

তিনি বলেন, 'হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গুলিবিদ্ধ সব রোগীর চিকিৎসা ফ্রি করে দিয়েছে। আমাদের এখানে অন্তত ৩০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনো ২৬ জন গুলিবিদ্ধ রোগী ভর্তি আছেন। দুজন আইসিউতে আছেন, তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

2h ago