পাচারের অর্থ বাংলাদেশে ফেরাতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ৫ সংস্থার চিঠি

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার কাজে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ল্যামিকে চিঠি দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক চারটি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে থাকা সুবিধাভোগীদের বিপুল দুর্নীতি উদ্ঘাটিত হচ্ছে। পাচার করা এসব অর্থ-সম্পত্তি বাংলাদেশের নাগরিকদের সম্পদ। 'নতুন বাংলাদেশ' এর পুনর্গঠনের পাশাপাশি দেশকে আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, গণতান্ত্রিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া এই জাতীয় সম্পদ অতি দ্রুত চিহ্নিত ও পুনরুদ্ধার করা জরুরি।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি এবং সমর্থনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে এ কাজে সহযোগিতার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়।

গত ৩০ আগস্ট টিআইবির সঙ্গে এই চিঠি দেয় টিআই-ইউকে, ইউকে অ্যান্টি করাপশন কোয়ালিশন, ইন্টারন্যাশনাল লইয়ারস প্রজেক্ট এবং স্পটলাইট অন করাপশন।

যুক্তরাজ্য ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ-সম্পদ ফেরত আনার লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সে সকল দেশে বাংলাদেশিদের অবৈধ সম্পদ জরুরি ভিত্তিতে ফ্রিজ করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে তিনটি বিষয় অতি জরুরিভাবে কার্যকর করার আহ্বান জানান। প্রথমত, কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তি বা কোম্পানির পাচার করা সম্পদ যুক্তরাজ্যে রয়েছে কি-না, এবং তা পুনরুদ্ধারযোগ্য কি-না এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সিকে সক্রিয় হয়ে পাচার করা অর্থ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ওই সম্পদ ফ্রিজ করা। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেমন- দুর্নীতি দমন কমিশন, আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংস্কারের পাশাপাশি ফরেনসিক হিসাবরক্ষক ও আইনজীবীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। তৃতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (বিশেষ করে দুবাই) সহ যে সকল দেশে বাংলাদেশের অর্থ-সম্পদ পাচার হয়েছে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের এ সব সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং পাচারের সঙ্গে জড়িত সকলের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পথ ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানানো হয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'বাংলাদেশ থেকে যে সকল দেশে অর্থ ও সম্পদ পাচার করা হয়েছে, তাদের সকলেই আমাদের উন্নয়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার এবং তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ প্রতিশ্রুতির কার্যকর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ সকল দেশকে তাদের এখতিয়ারে থাকা সকল বাংলাদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অবৈধ সম্পদ ফ্রিজ করার জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানাই।'

স্পটলাইট অন করাপশন এর নির্বাহী পরিচালক সুসান হোলে বলেন, 'যুক্তরাজ্যে পাচার করা সম্পদ খুঁজে বের করতে এবং আশ্রিত দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে যুক্তরাজ্যকে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সহায়তা করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টা জোরদার করার মাধ্যমে যুক্তরাজ্য দেশটির প্রতিশ্রুত গণতান্ত্রিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যত বিনির্মাণে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।'

টিআই-ইউকে এর ডিরেক্টর অফ পলিসি ডানকান হেম্‌জ বলেন, 'আমরা জানি, অপ্রদর্শিত সম্পদের অধিকারী বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত অভিজাত ব্যবসায়ী মহলের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশে। ব্রিটিশ সরকারের সারা বিশ্বে মিত্ররাষ্ট্রসমূহ এবং বাংলাদেশের সুশীল সমাজের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করা উচিত, যাতে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবং তাদের সহায়তাকারীদের বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ ফ্রিজ করা যায় এবং তারা অবৈধ সম্পদ ভোগ করতে না পারেন।'

Comments

The Daily Star  | English
Gunfight

Local BNP leader shot dead in Dhaka’s Badda

When Kamrul was sitting on a chair on the roadside and talking with 2-3 people, two assailants on foot came from behind and shot him before fleeing the scene

3h ago