স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স

বিআরটিএ ও ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের বিরোধে ভোগান্তিতে ৬ লাখের বেশি আবেদনকারী

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সরবরাহকারী ভারতীয় মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের (এমএসপি) মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধের কারণে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ডের জন্য আবেদনকারীদের অপেক্ষার সময় বেড়েই চলেছে।

প্রয়োজনীয় এসব কার্ডের জন্য বর্তমানে ৬ লাখ ১০০ হাজার আবেদন জমা রয়েছে। আবেদনকারীরা কখন তাদের কার্ড পাবেন তার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই।

বিআরটিএ'র রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাইয়ে ১২০ কোটি টাকার চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী ২০২৬ সালের জুলাইয়ের মধ্যে ৪০ লাখ স্মার্টকার্ড সরবরাহ করতে হবে।

তবে সরবরাহকারী সংস্থাটি এখন পর্যন্ত এই সংখ্যার মাত্র অর্ধেক সরবরাহ করতে পেরেছে বলে জানা গেছে।

সমস্যাটি আরও জটিল হয়ে উঠেছে, কারণ এমএসপি এখনও ৬ লাখের মতো আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেনি।

কার্ড সরবরাহে এমএসপির দেরি কারণে বিআরটিএর কার্যক্রমে প্রভাব পড়ছে বলে জানান কর্মকর্তারা। অন্যদিকে এমএসপির দাবি, বিআরটিএ বিল পরিশোধ না করায় উত্পাদন বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, নতুন আবেদন, নবায়ন ও সংশোধনের জন্য আবেদন আসছে অব্যাহতভাবে। 

স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ডের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা আবেদনকারীদের জন্য নানা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।

অনেকে রিপোর্ট করেছেন, বৈধ স্মার্টকার্ড ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাধাগ্রস্ত হয়।

মোটরসাইকেল চালক মো. রায়হান দুই বছর আগে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইন্সের জন্য আবেদন করেছেন। ট্রাফিক পুলিশেরা প্রাথমিক কাগজপত্র   গ্রহণ করতে রাজি হন না। এ কারণে হতাশা প্রকাশ করেন রায়হান।  

এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আবেদনকারীদের ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কিউআর কোডসহ অস্থায়ী কাগজপত্র দেওয়ার সুযোগ দিয়ে ই-পেপার ড্রাইভিং লাইসেন্স সিস্টেম চালু করেছে বিআরটিএ।

বিআরটিএ'র নিরীক্ষা ও আইন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল ইসলামের মতে, এই ব্যবস্থা অন্তর্বর্তীকালীন সমাধান হিসেবে কাজ করে। এর ফলে লোকজন তাদের স্মার্টকার্ড না পাওয়া পর্যন্ত গাড়ি চালাতে পারবেন।

তিনি বলেন, 'সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য চেষ্টা করছে। তাই আমরা বিকল্প হিসেবে এই সিস্টেম চালু করেছি।'

বিআরটিএ স্মার্টকার্ড ইস্যুর জন্য সব সময় বিভিন্ন ঠিকাদারের উপর নির্ভর করে এসেছে। এমএসপির আগে, একটি ফরাসি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেড চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন করে। তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রায় ১৫ লাখ কার্ড সরবরাহ করেছে।

চলমান সংকটের কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নীতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট সরকার ক্ষমতায় এসে ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ডের পরিবর্তে স্ট্যান্ডার্ড পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি) কার্ড চালু করে।

স্মার্টকার্ড ইস্যুতে বিলম্ব হয়েছে সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আমল থেকে। পক্ষপাতদূষ্ট চুক্তির কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল।

বিআরটিএ'র অভ্যন্তরে দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ২০২১ সালে তাদের এক প্রতিবেদনে বলে, ৮৩.১ শতাংশ পরিবার ড্রাইভিং লাইসেন্স চাওয়ার সময় কোনো না কোনো ধরনের দুর্নীতির শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৮৩.৭ শতাংশ পরিষেবা ত্বরান্বিত করার জন্য মধ্যস্থতাকারী বা 'দালালদের' উপর নির্ভর করতে হয়েছে।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, নতুন আবেদনকারীরা পিভিসি কার্ড পাবেন এবং পুরাতন আবেদনকারীদের পূর্বের কার্ড জমা দিতে হবে।

তবে কবে নাগাদ তা জারি করা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো সময়সীমা নেই।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus, Charter, and Our Future

Yunus, Charter, and Our Future

Can the vision for 'New Bangladesh' ignore the poor, farmers, workers, youth, women, or employment and climate crises?

9h ago