তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তির বিধান বাতিল করলেন হাইকোর্ট

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান বিলুপ্ত করা সংবিধানের পঞ্চোদশ সংশোধনীর অংশটি বাতিল ও সংবিধানের যেকোনো সংশোধনী আনতে গণভোটের বিধান পুনরুজ্জীবিত করেছেন হাইকোর্ট।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তি গণতন্ত্র; অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন; বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, যা সংবিধানের মূল কাঠামো ধ্বংস করেছে বলে মন্তব্য করেন আদালত।

আজ মঙ্গলবার পৃথক দুটি রিট আবেদনের শুনানিতে আদালত সংবিধানের ৭(ক) ও ৭(খ) অনুচ্ছেদ বাতিল করে সেগুলো অকার্যকর ও অসাংবিধানিক বলে রায় দেন।

সংবিধানের ৭ক (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায়-

(ক) এই সংবিধান বা ইহার কোনো অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে; কিংবা

(খ) এই সংবিধান বা ইহার কোনো বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে-

তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে।

(২) কোনো ব্যক্তি (১) দফায় বর্ণিত-

(ক) কোনো কার্য করিতে সহযোগিতা বা উস্কানি প্রদান করিলে; কিংবা

(খ) কার্য অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন করিলে-

তাহার এইরূপ কার্যও একই অপরাধ হইবে।

(৩) এই অনুচ্ছেদে উল্লেখিত অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি প্রচলিত আইনের দ্বারা অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

৭(খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।

আজ আদালত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু অংশ অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় দেন। ১৯৯৬ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনকারী ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছিল।

ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, রাষ্ট্রীয় অঞ্চল, জাতীয়তাবাদ, জাতির পিতা ও সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যাসহ রাষ্ট্রীয় নীতিমালার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ধারায় হস্তক্ষেপ না করে রায়ে হাইকোর্ট বলেন, এসব বিষয়ে পরবর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা পৃথক দুটি রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালত বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের ভিত্তিতে গঠিত বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ ভিন্ন।

সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'যদি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আইনের এইরূপ কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হইয়াছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে, যাহা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহা হইলে তিনি প্রশ্নটি আপিল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করিতে পারিবেন এবং উক্ত বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানির পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করিতে পারিবেন।'

Comments

The Daily Star  | English

‘This fire wasn’t an accident’: Small business owner’s big dreams destroyed

Once a garment worker, now an entrepreneur, Beauty had an export order ready

5h ago