‘সংস্কারে একমত হলে পরস্পরকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোনো কারণ নেই’

সংস্কারের বিষয়ে একমত হলে একে অন্যকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনে মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, 'কী কী সংস্কার প্রয়োজন, কে করবে, কত দিনে করবে, কীভাবে তা কার্যকর হবে—আগামী দিনগুলোতে সেই সিদ্ধান্তগুলো আমাদের নিতে হবে।'

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে 'ঐক্য কোন পথে' শীর্ষক অধিবেশনে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে দুই দিনব্যাপী এই সংলাপ শনিবার শেষ হবে। ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস) এই সংলাপের আয়োজন করে।

তিনি বলেন, 'সংস্কারের প্রশ্নে আমাদের জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে যদি আমাদের অবস্থানে কিছুটা ছাড়ও দিতে হয়, সেই ছাড় দেওয়ার প্রস্তুতিও আমাদের রাখতে হবে।'

রিজওয়ানা বলেন, 'ঐক্যের কথা বললে বুঝতে হবে কী কী বিষয়ে ঐক্য চাই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য ঐক্য প্রয়োজন, রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য ঐক্য প্রয়োজন, তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা রাষ্ট্র পরিচালনায় অন্তর্ভুক্তির জন্য ঐক্য প্রয়োজন। জনগণকে সম্পৃক্ত করেই মতৈক্যে পৌঁছাতে হবে।'

'এবার সংস্কারে পিছপা হলে চলবে না। আমাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন হবে, যাতে সংস্কারে জনমতের প্রতিফলন দেখতে পাই। জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে না পারলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও কঠিন হবে। কারণ মানুষের প্রত্যাশার সঙ্গে আমাদের যদি গ্যাপ থেকে যায়, তাহলে বারবারই আমরা রাজনৈতিক অস্বস্তি ও জটিলতার মধ্যে পড়বো।'

এই উপদেষ্টা বলেন, 'শুধু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নয়, এই পরিবর্তনের দায়-দায়িত্ব আমাদের সবাইকে নিতে হবে। কাগজে-কলমে সংস্কার করে দিয়ে গেলে হবে না, সংস্কারের চর্চা করতে হবে, যাতে মানুষ এর সুফল পায়। কেবল নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়ে গেলেই সব কিছুতে পরিবর্তন হয়ে যাবে না। সেটা কি সম্ভব যতক্ষণ পর্যন্ত না মনোজগতে পরিবর্তন না আসে? আমাদের এই উপলব্ধির জায়গাটি তৈরি করতে হবে যে, আমরা কেউই আসলে ক্ষমতায় যাই না, যাই দায়িত্বে। দায়িত্ব পালন করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'

তিনি আরও বলেন, 'ক্ষমতা প্রয়োগে জনগণের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। ঐক্য কোন পথে, এটি যদি জিজ্ঞাসা করেন, আসলে সংস্কারের যে প্রয়োজন আছে এটা আমরা সবাই স্বীকার করে নিয়েছি। ঐক্যের পথ বন্ধুর, এখানে সবার কথা শুনেই আমাদের ঐক্যের পথে যেতে হবে। সংস্কারের প্রয়োজন স্বীকার হলেও কোন কোন পথে লাগবে, কতদিনে হওয়া সম্ভব তার নিরূপণ জরুরি।'

'ছকে ফেলা রাজনীতি বদলানোর বা বৈষম্যহীনতা দূর করার যাত্রা সহজ হওয়ার নয়। এ যাত্রায় খুবই কঠিন রাস্তার ওপর দিয়ে আমাদের যেতে হবে। আমাদের ধৈর্য্য রাখতে হবে। প্রথাগতভাবে চলে আসা বিষয়গুলো একদিনে শেষ হবে না,' যোগ করেন তিনি।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'তরুণ নেতৃত্বের প্রতি আমি সব সময়ই আস্থাশীল ও আশাবাদী। বড় ধরনের পরিবর্তন, সেটি তারুণ্যই আনতে পারবে। কারণ তারাই নতুন করে ভাবতে শিখেছে। তারাই একটি জিনিসকে নতুন চশমা দিয়ে দেখতে শিখেছে। কিন্তু নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়ে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, তাও কিন্তু ঠিক নয়। পরিবর্তন একটি প্রক্রিয়া, কেবল আইন করে দিলেই হবে না। এই প্রক্রিয়া যাতে চালু থাকে, এ জন্য আমাদের নিজেদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। এখানে তারুণ্যের যেমন ভূমিকা আছে, অভিজ্ঞতারও একটি ভূমিকা থাকবে।'

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, 'আমি আশাবাদী যে, এ সরকার দায়িত্ব নিয়ে কাজগুলো করছে। সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট পাওয়ার পরই আমরা পাবলিক এনগেজমেন্টে (জনসম্পৃক্ততায়) চলে যাব। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ঐক্যমতের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হবে।'

'সংস্কারটি করতে পারলে যারা ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন, তাদের জন্যও অনেক ভালো হবে। বিদ্যমান রাজনৈতিক নেতাদের জন্যও ভালো হবে, ভবিষ্যত তরুণ নেতাদের জন্যও ভালো হবে। কারণ তখন আমরা জানতে পারবো জনগণের প্রত্যাশা কী এবং কোন প্রত্যাশার বিপরীতে কীভাবে ডেলিভারি দিতে হবে,' বলেন তিনি।

ঐক্যের পথ সরল নয় মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, 'ঐক্যের পথ আঁকা-বাঁকাই হবে, কঠিনই হবে। কিন্তু আমাদের বদ্ধপরিকর হতে হবে, যেন জনগণের আশার প্রতিফলন আমরা ঘটাতে পারি।'

Comments

The Daily Star  | English
govt employees punishment rule

Govt employees can now be punished for infractions within 14 working days

Law ministry issues ordinance amending the Government Service Act, 2018

39m ago