প্রশাসনে বাড়ছে নারী নেতৃত্ব

ছবি: সংগৃহীত

প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী কর্মকর্তাদের নেতৃত্ব বাড়ছে। বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী কর্মকর্তাদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। বর্তমানে ৬৪টি জেলার মধ্যে অন্তত ১৮ জেলায় নারী ডিসি দায়িত্ব পালন করছেন, এডিসি আছেন ৬৩ জন। একই সময়ে ১৫৮টি উপজেলার ইউএনও এবং ১৪১ জন নারী এসিল্যান্ডের দায়িত্বে আছেন।

এছাড়া প্রশাসনে শীর্ষ পদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অন্তত ১৪ জন নারী কর্মকর্তা, এর মধ্যে সিনিয়র সচিব আছেন একজন। মাঠ প্রশাসনের সকল এবং প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোতে সাধারণত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করেন। গত ৫ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার সংখ্যা ৬ হাজার ৫৩৮ জন, এর মধ্যে নারী কর্মকর্তা আছেন দুই হাজার জন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য এমন চিত্রই বলছে।

মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছর পর্যন্ত নারী ইউএনও দেড়শ জনের বেশি ছিল না। অন্যদিকে নারী ডিসি আট থেকে ১৩ জনের মধ্যে ছিলেন। তবে মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ পদ অর্থাৎ বিভাগীয় কমিশনার পদে বর্তমানে কোনো নারী কর্মকর্তা নেই।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) পদে ১৮ জন নারী কর্মকর্তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ছয়জন নারী ডিসি আছেন ঢাকা বিভাগে, চারজন নারী ডিসি নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে রাজশাহী। অন্যদিকে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর ও খুলনা বিভাগে দুইজন করে নারী ডিসি আছেন। তবে বরিশাল ও সিলেটে কোনো নারী ডিসি নেই।

প্রশাসনের শীর্ষ পদ সচিব পর্যন্ত পৌঁছানোর অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একজন নারীকে সফল হতে হলে সবার আগে প্রয়োজন পরিবারের সমর্থন। আমার মা-বাবা আমাকে মেয়ে হিসেবে নয়, সন্তান হিসেবে মানুষ করার চেষ্টা করেছেন। তাই পড়াশোনা থেকে ক্যারিয়ার গড়া পর্যন্ত পরিবার থেকে উৎসাহ পেয়েছি।'

'বিয়ের পর স্বামীর কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া আরও বেশি ভাগ্যের বিষয়। আমি সেটাও পেয়েছি। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে তো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকেই। আমার মতে পরিবার থেকে সঠিক সহযোগিতা পাওয়া গেলে বাকি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হয়।'

ইউএনও হিসেবে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৩৩ জন নারী কর্মরত আছেন চট্টগ্রাম বিভাগে, ঢাকা বিভাগের ৩২টি উপজেলার দায়িত্ব নারী কর্মকর্তাদের হাতে। এর বাইরে খুলনা বিভাগে ২৮, রাজশাহীতে ২৫, সিলেটে ১৩, রংপুরে আট, ময়মনসিংহে ১১ এবং বরিশাল বিভাগে আটজন নারী ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

নেত্রকোণার ডিসি বনানী বিশ্বাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নারী-পুরুষ সব কর্মকর্তার জন্যই চ্যালেঞ্জের। নারী হিসেবে সেটা আরও বেশি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারীদের দক্ষতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলের জন্যও কাজ করা দরকার।'

কেন্দ্রীয় প্রশাসনেও নারীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উপস্থিতি এখন লক্ষণীয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী অতিরিক্ত সচিব পদে আছেন ৬৯ জন। এছাড়া যুগ্মসচিব পদে ১৭৩, উপসচিব পদে ৩৯০, সিনিয়র সহকারী সচিব ৬৬৮ এবং সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৩০৬ নারী কর্মকর্তা।

মাঠ প্রশাসনে কাজের চ্যালেঞ্জ জানতে চাইলে নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার ইউএনও ফাইজুল ওয়াসীমা নাহাত ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দ্বিগুণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। ইউএনওর চেয়ারে নারীদের দেখতে মানুষ এখনো অভ্যস্ত নয়। পুরুষ কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকলে মানুষ যেভাবে গ্রহণ করে, নারীদের ক্ষেত্রে সেটা কঠিন হয়।'

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, 'এ কারণে নারী হিসেবে আমি তুলনামূলক বেশি কাজ করার চেষ্টা করি। যাতে কেউ বলতে না পারেন যে নারী হওয়ার কারণে সমস্যা হচ্ছে।'

তবে ভিন্ন কথা জানালেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি ইউএনও থাকার সময়ের অভিজ্ঞতার বিষয়ে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাঠে কাজ করতে গিয়ে বেশিরভাগ মানুষের কাছ থেকে সম্মান পেয়েছি। এজন্য অনেক কাজের চাপ থাকলেও দায়িত্ব উপভোগ করেছি। তবে স্থানীয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর জন্য উন্নয়নমূলক কাজগুলো সাধারণ মানুষের স্বার্থে করতে গেলে বেগ পোহাতে হয়েছে।'

তার মতে, সততা ও সাহস নিয়ে কাজ করলে নারী কর্মকর্তা হিসেবে কেউ খাটো করেন না, বরং সাধারণ মানুষ উৎসাহ দেন।

Comments

The Daily Star  | English

New public service ordinance: Govt mulls softening strict provisions

Say high-level meeting sources; Secretariat employees suspend protests for today

10h ago