রানা প্লাজা ধসের ১২ বছর

‘কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেল, ছেলে হত্যার বিচার পেলাম না’

ছবি: স্টার

রানা প্লাজা ধসের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার ও ক্ষতিপূরণের আশায় পথ চেয়ে আছেন হতাহত শ্রমিক ও তাদের স্বজনেরা। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে বাসস্ট্যান্ডের কাছে ১০ তলা ভবনটি ধসে প্রাণ হারান অন্তত ১ হাজার ১৩৬ জন, আহত হন দুই হাজারের বেশি শ্রমিক।

দীর্ঘ এক যুগেও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকদের কষ্ট ভারী হয়েছে। তাদের অভিযোগ, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের একটি দাবিও পূরণ হয়নি।

আজ বুধবার প্রতি বছরের মতো নিহতদের স্মরণে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে জড়ো হন নিহত শ্রমিকদের স্বজন, আহত শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দোষীদের শাস্তি ও যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ কয়েক দফা দাবি জানান তারা।

এদিন সকাল থেকেই রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা। বলেন, রানা প্লাজা ধস শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

'ভিক্ষা করে দিন কাটাই'

রানা প্লাজার আট তলায় কাজ করতেন ছালমা আক্তার। ওই ঘটনায় প্রাণে বাঁচলেও গুরুতর আহত হয়ে আর কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারেননি তিনি।

ছালমা আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রানা প্লাজা ধসে পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা সেবা নিয়েও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারিনি। ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন পার করছি। নামমাত্র অনুদান ছাড়া ক্ষতিপূরণ পাইনি, বিচারও পাইনি। আমাদের কোনো দাবিই পূরণ হয়নি। আমি ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।'

রানা প্লাজার পঞ্চম তলায় আয়রনম্যান হিসেবে কাজ করতেন রাব্বি মিয়া। সেদিন নিহত হন রাব্বি। রাব্বি মারা যাওয়ার পর থেকেই প্রতি বছর ২৪ এপ্রিল রাব্বির মা বৃদ্ধা রাহেলা বেগম ছেলের স্মরণে সেখানে আসেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাহেলা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একমাত্র কর্মক্ষম ছেলেটাকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে কিন্তু ছেলে হত্যার বিচার এখনো পেলাম না। মা হিসেবে আমার প্রথম দাবি ছেলে হত্যার বিচার। তারপর ক্ষতিপূরণ। আমাদের এক জীবনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।'

অন্তর্বর্তী সরকার রানা প্লাজার শ্রমিকদের দাবি পূরণ করবে এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে বলে আশা করছেন শ্রমিক নেতারা।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, 'রানা প্লাজা ধসের ঘটনা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার এখনো নিশ্চিত হয়নি। শেখ হাসিনার সরকার রানা প্লাজার একটি দাবিও পূরণ করেনি। বর্তমানে আমরা আশাবাদী অন্তর্বর্তী সরকার রানা প্লাজার শ্রমিকদের দাবি দাওয়া পূরণ করবে এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে।'

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, 'দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও আমাদের একটি দাবিও পূরণ হয়নি। এই সরকার আমাদের দাবিগুলো পূরণ করবে বলে আশা করছি।'

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর থেকেই ২৪ এপ্রিলকে জাতীয়ভাবে শ্রমিক শোক দিবস ঘোষণা, রানা প্লাজার সামনে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি, রানা প্লাজার জমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত ও আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং হতাহত শ্রমিকদের এক জীবনের আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ ৪৮ লাখ টাকা দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছেন শ্রমিকেরা। 

Comments

The Daily Star  | English

Nineteen killed in Nepal in 'Gen Z' protest over social media ban

Police used live ammunition, tear gas, and water cannons against protesters demonstrating against social media restrictions and corruption

4h ago