এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়ায় কেএমপি ঘেরাও, পুলিশ কমিশনার অবরুদ্ধ

শনিবার কেএমপির সামনে বিক্ষোভ হয়। ছবি: দীপংকর রায়/স্টার

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা চালানো উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত দাশকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সদর দপ্তর ঘেরাও করেছে স্থানীয় একদল বিক্ষোভকারী।

একইসঙ্গে তারা কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগের দাবিও করেছেন।

আজ বুধবার বিকেলে কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাও করে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

এতে কেএমপি কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কার্যালয়ের ভেতর অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

কেএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আহসান হাবীব তাদের অবরুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন।

প্রায় ৪ ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘেরাও কর্মসূচি স্থগিত করা হয় এবং আগামীকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় আবার ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে খানজাহান আলী সড়কে কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে গিয়ে দেখা যায়, একদল বিক্ষুব্ধ 'শিক্ষার্থী ও জনতা' কেএমপির সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে 'এসআই সুকান্ত দাশ বাইরে কেন, জবাই চাই'সহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন।

সড়কে তারা টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করেছেন। এতে রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে টুটপাড়া কবরস্থান পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

বিক্ষোভকারীরা জানান, এসআই সুকান্ত দাশ গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। ৫ আগস্ট থেকে তিনি চাকরিতে অনুপস্থিত এবং পলাতক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে খুলনা মহানগরীর ইস্টার্ন গেট এলাকায় স্থানীয়রা তাকে দেখতে পান। এরপর তাকে আটকে মারধর করে খান জাহান আলী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু, পুলিশ মামলা থাকা সত্ত্বেও রাতেই তাকে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ বিক্ষোভকারীদের।

সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়ার খবর পেয়ে আজ বিকেল ৩টার দিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ব্যানার নিয়ে কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে স্থানীয় জনতা তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা মহানগরের সিনিয়র মুখপাত্র রুমি রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আন্দোলনের সময় সোনাডাঙ্গা থানার এসআই সুকান্ত দাশ ছাত্রদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে। তিনি একাধিক মামলার আসামি। গতকাল তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করলেও পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার ও পুলিশ কমিশনার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলবে।'

আরেক বিক্ষোভকারী তাসলিম হোসেন বলেন, 'আমরা স্বৈরাচারের দোসরের সহযোগী কোনো পুলিশ কমিশনার দেখতে চাই না। এসআই সুকান্ত দাশকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমাদের বিক্ষোভ চলবে।'

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুকান্ত দাশের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায়। তিনি দীর্ঘদিন কেএমপির সদর ও সোনাডাঙ্গা থানায় দায়িত্ব পালন করেছেন।

তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় গত ১২ ডিসেম্বর মামলা হয়। মামলাটি বর্তমানে ডিবিতে তদন্তাধীন।

এছাড়া, বিএনপির নগর সভাপতি শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুরসহ দুটি মামলা চলমান রয়েছে সুকান্তর বিরুদ্ধে।

অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আহসান হাবীব বলেন, 'কিছু লোক কেএমপির সামনে সড়কে অবস্থান নিয়েছে। আমাদের ফটকে তালা দিয়েছে। আমরা সবাই অফিসের মধ্যে আছি।'

রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিক্ষোভঁকারীদের একজন নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শেখ ইমতেহান রহমান কর্মসূচি আজকের মতো স্থগিত ঘোষণা দিয়ে বলেন, 'আগামীকাল বৃহস্পতিবার এইচএসসি পরীক্ষার জন্য আপাতত আজকের কর্মসূচি সমাপ্ত করা হচ্ছে। তবে এসআই সুকান্তকে গ্রেপ্তার এবং কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে একই জায়গায় কর্মসূচি শুরু হবে।'

এরপর আন্দোলনকারীরা সড়ক ত্যাগ করলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের প্রধান ফটকে তখনও তালা লাগানো ছিল।

Comments

The Daily Star  | English
July uprising and the rise of collective power

July uprising and the rise of collective power

Through this movement, the people of Bangladesh expressed their protest using a language shaped by long-standing discontent.

10h ago