কেএমপি কমিশনারের অপসারণ দাবিতে এবার রূপসা সেতুর টোল প্লাজা অবরোধ

টোল প্লাজার সামনে অবরোধ করায় রূপসা সেতুর দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণের দাবিতে রূপসা সেতুর (খানজাহান আলী সেতু) টোল প্লাজা অবরোধ করেছে আন্দোলনকারীরা। 

চলমান আন্দোলনের পঞ্চম দিনে আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রূপসা সেতুর টোল প্লাজার সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। 

এতে সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে শুরু করে সেতুর উপরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেতুর দুই পাশে আটকে পড়ে শতশত বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকারসহ সব ধরনের যানবাহন। 

প্রায় ২ ঘণ্টা অবরোধের পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

রূপসা সেতুর টোল প্লাজার সামনে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

এর আগে, গত ৪ দিন ধরে কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন আন্দোলনকারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, 'সচেতন ছাত্র-জনতা' ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশ, ছাত্রদল-যুবদলের নেতাকর্মীরা। বিকেল ৩টার দিকে টোল প্লাজার আশেপাশে জড়ো হন।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সেতুর মুখ বন্ধ করে দেয়। 

এসময় আন্দোলনকারীরা 'পুলিশ কমিশনার জুলফিকার একটা স্বৈরাচার', 'এই মুহূর্তে খুলনা ছাড়', 'পুলিশ লীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও' ইত্যাদি স্লোগান দেয়।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার ও তার ঘনিষ্ঠ কিছু কর্মকর্তার সহযোগিতা জুলাই হত্যা মামলার আসামি পুলিশ কর্মকর্তা এসআই সুকান্ত দাসকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আন্দোলনকারীরা মাইকিং করে ঘোষণা দেন, জনদুর্ভোগ ও বৈরী আবহাওয়ার কথা বিবেচনায় নিয়ে আজকের কর্মসূচি আপাতত শেষ করা হচ্ছে। এরপর তারা ধীরে ধীরে এলাকা ছেড়ে চলে যান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা জেলা সদস্যসচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, 'আজকের কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা আইজিপিকে আলটিমেটাম দিয়েছি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ সমস্যার সমাধান না হলে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নগরীর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে সড়ক অবরোধ করা হবে।'

'এরপরও যদি দাবি মানা না হলে রোববার থেকে খুলনার সড়ক, রেলপথ ও নৌপথ একযোগে অবরোধ করা হবে,' বলেন তিনি।

এই বিক্ষোভের সূচনা গত মঙ্গলবার খানজাহান আলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত দাশকে স্থানীয় লোকজন আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের ঘটনায়। কিন্তু পুলিশ পরে তাকে ছেড়ে দেয়। এর প্রতিবাদে বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শনিবার কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

শনিবার থেকে তারা আবারও কেএমপি সদরদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। সেদিন সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম খুলনা প্রেসক্লাবে গেলে আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে প্রেস সচিবের সঙ্গে তারা কমিশনারের অপসারণের বিষয়ে আলোচনা করেন।

গতকাল সোমবারও আন্দোলনকারীরা কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সেখান থেকেই ঘোষণা আসে মঙ্গলবার রূপসা সেতুর টোল প্লাজায় 'ব্লকেড' কর্মসূচি পালন করার।

তবে আন্দোলন ঘিরে বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেতরেই বিভক্তি দেখা দিয়েছে। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা একাধিক নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে, কেউ কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন। একদিকে একটি অংশ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অনড় অবস্থান নিয়েছে, অন্যদিকে আরেক পক্ষ দাবি করছে, এসআই সুকান্তকে গ্রেপ্তার করায় তাদের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে।

উল্লেখ্য, এসআই সুকান্ত দাসকে গত বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s body taken to Parliament Complex ahead of janaza

Janaza will be held at Manik Mia Avenue at 2pm

2h ago