অবৈধ চায়না জাল ও দুয়ারির দাপটে হুমকিতে ঐতিহ্যবাহী চাঁই

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বাধাল হাটে সারি সারি সাজানো মাছ ধরার চাঁই। ছবি: স্টার

বর্ষা নামতেই প্রাণ ফিরে পেয়েছে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বাধাল হাট। প্রতি হাটবারে শত শত বাঁশের তৈরি মাছ ধরার চাঁই (ফাঁদ) সারি সারি সাজানো থাকে সড়কের পাশে। 

স্থানীয়ভাবে লতা ও বাঁশ দিয়ে তৈরি চাঁইগুলো একদিকে যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি টেকসই ও কার্যকর। প্রতিটি চাঁই বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ২০০ টাকায়।

দৈবজ্ঞহাটী এলাকার চাঁই বিক্রেতা রবীন চন্দ্র দাস বলেন, 'আমাদের চাঁই দিয়ে মাছের ছোট পোনা স্বাভাবিকভাবেই বেড়িয়ে যেতে পারে। তাই এটি পরিবেশবান্ধব। কচুয়ার চালতাখালী, ফুলতলা, পিরোজপুরের কদমতলা, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের ঝিলবুনিয়া ও কচুবুনিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসে কিনতে। প্রতি হাটে ৫০০ থেকে ৭০০টি চাঁই বিক্রি হয়।'

এই চাঁইগুলো সাধারণত মাঠে ও খালে পাতা হয়। এতে পুটি, চিংড়ি, শৈল, টেংরা ও কৈসহ নানা জাতের দেশি মাছ ধরা পড়ে। তবে প্রাচীন ও টেকসই এই পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে কিছু অসাধু জেলে গোপনে অবৈধ চায়না জাল ও চায়না দুয়ারি ব্যবহার করছেন, যা চাঁই ব্যবসার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চান্দেরকোলা গ্রামের চাঁই বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'চায়না জালে বড়-ছোট সব মাছ আটকা পড়ে। এতে মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে, পাশাপাশি আমাদের চাঁইয়ের চাহিদাও কমে গেছে।'

ছবি: স্টার

আফরা গ্রামের জেলে নাজিম শেখ বলেন, 'আমরা এখনো বাঁশের চাঁই ব্যবহার করছি। তবে অনেকেই নিষিদ্ধ চায়না জাল ফেলে সব মাছ ধরে নিচ্ছেন এবং জলজ সম্পদ ধ্বংস করছেন।'

সাংদিয়া গ্রামের মৃণাল দাস বলেন, 'আমরা প্রকৃতি রক্ষা করে মাছ ধরি। কিন্তু চায়না দুয়ারি ব্যবহারকারীরা গোটা ব্যবস্থাটাকেই শেষ করে দিচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মাছের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।'

সাইনবোর্ড এলাকার জেলে কালাম শেখ ও আলামিন বলেন, 'চায়না জালে মাছের ডিম পাড়ার জায়গাগুলো পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা আর মাছ পাচ্ছি না, আয়ও কমছে।'

বাধাল হাটের চাঁই ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার চায়না জাল ও দুয়ারি ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে তাদের বিক্রি আবারও বাড়বে।

হাটের চাঁই বিক্রেতা রবীন বলেন, 'আমরা শুধু ফাঁদ বিক্রি করি না, প্রকৃতির সঙ্গে টিকে থাকার একটা উপায়ও বিক্রি করি। সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায়, তবে এই হস্তশিল্প আবারও গর্বের জায়গা হয়ে উঠবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Voting in Ducsu election starts

Students started casting their votes at 8:00am across polling centres set up in residential halls amid tight security. The balloting will continue until 4:00pm.

35m ago