সচিব বিদেশ সফর শেষে ফিরবেন ৩ আগস্ট, অবসর ৪ আগস্ট

সচিবের বিদেশ সফর নিয়ে সমালোচনা
মো. মহিউদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অবসরের কয়েকদিন আগে পদের তুলনায় 'কম গুরুত্বপূর্ণ' অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিদেশ সফরে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সমাজকল্যাণ সচিব মো. মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে।

মহিউদ্দিন আগামী ৩ আগস্ট দেশে ফিরবেন এবং ৪ আগস্ট তার শেষ কর্মদিবস। এরপর তিনি অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাবেন।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন, ২৬ জুলাই সকালে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন।

'সোশ্যাল প্রোটেকশন অ্যান্ড লেবার নলেজ এক্সচেঞ্জ ইভেন্ট' শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহিউদ্দিন। মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই সফরের ব্যয় বহন করছে বিশ্বব্যাংক।

প্রতিনিধি দলে আরও রয়েছেন, অতিরিক্ত সচিব নারগিস খানম, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান, যুগ্মসচিব মো. নাজমুল আহসান এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের আইএসও প্রকল্প পরিচালক গোলাম মোস্তফা।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ডিসেম্বরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এক নির্দেশনা জারি করা হয়, যেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ওপর নিয়ম আরোপ করা হয়। এতে বলা হয়, জাতীয় স্বার্থে একান্ত প্রয়োজনীয় না হলে মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ বিভাগ বা সংস্থার প্রধানরা একসঙ্গে বিদেশ সফর করবেন না।

এই নির্দেশনা সত্ত্বেও মহিউদ্দিনের সফরসঙ্গী হয়েছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক—যিনি তার মন্ত্রণালয়ের অধীনেই রয়েছেন।

কোনো কর্মকর্তা প্রকাশ্যে এই সফর নিয়ে সমালোচনা না করলেও বেশ কয়েকজন বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সফরের সময়কাল নিয়ে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, 'বর্তমান সরকারের সচিবরাও আগের সরকারের মতোই আচরণ করছেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা রীতিমতো প্রকাশ্যে নিয়ম ভঙ্গ করছেন।'

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে মহিউদ্দিনের ব্যক্তিগত সচিব মাহবুবুল আলম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, 'মতবিনিময়ের মতো অনুষ্ঠানে যুগ্ম-সচিব লেভেলের কাউকে পাঠালেই চলতো। এতে করে তাদের নতুন অভিজ্ঞতা হতো এবং সেটা ভবিষ্যতে কাজে লাগত। কিন্তু এই সফরে সচিবের সঙ্গে গেছেন একাধিক অতিরিক্ত সচিব। এটা অপ্রত্যাশিত।'

সদ্য অবসরপ্রাপ্ত এক সচিব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, অবসরের আগমুহূর্তে মহিউদ্দিনের এমন সফর 'বাড়াবাড়ি'।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, 'জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা যখন এমন আচরণ করেন, তখন পুরো প্রশাসনের জন্যই বিষয়টি লজ্জার হয়ে দাঁড়ায়। অবসরের অন্তত দুই বছর আগে থেকে বিশেষভাবে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন ছাড়া বিদেশ সফর না করাই ভালো।'

সাবেক সচিব ও লেখক একেএম আব্দুল আউয়াল মজুমদারও এর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, 'আমি যখন সচিব ছিলাম, অবসরের প্রায় ৫৩ মাস আগ থেকে স্বেচ্ছায় বিদেশ সফরে আর যাইনি। অথচ, এই ৫৩ মাসে অন্তত ১০টি বিদেশ সফরের সুযোগ এসেছিল।'

তিনি বলেন, 'আমি এই মূল্যবোধটা শিখেছি আমরা পূর্বসূরিদের কাছ থেকে। এজন্য আমি নিজে না গিয়ে জুনিয়র কর্মকর্তাদের বিদেশ পাঠাতে উৎসাহ দিতাম, যেন তারা সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ সময় দেশকে সেবা দিতে পারে।'

তবে এই সফরের জন্য মহিউদ্দিনকে একা দায়ী করা ঠিক হবে না উল্লেখ করে আউয়াল বলেন, 'একজন সচিবের বিদেশ সফরের জন্য সরকার প্রধানের অনুমোদন লাগে। তাহলে প্রশ্ন হলো—প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কেন এটি ধরতে পারেনি?'

তবে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ সচিবের এই বিদেশ সফরকে সমর্থন করছেন। মঙ্গলবার রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট একটি প্রকল্পে মহিউদ্দিনের সম্পৃক্ততায় অগ্রগতি হয়েছে। এ কারণেই তাকে এই বিদেশ সফরে পাঠানো হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশনার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, 'প্রকল্পের প্রয়োজন বিবেচনা করেই সচিবকে পাঠানো হয়েছে। এটাকে অন্যভাবে দেখা উচিত না।'

Comments

The Daily Star  | English

Hopes run high as DU goes to vote today

The much-anticipated Ducsu and hall union elections are set to be held today after a six-year pause, bringing renewed hope for campus democracy.

6h ago