ইন্দোনেশিয়ার জিও নিয়ে অস্ট্রেলিয়া গেলেন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এনবিআর সদস্য

বেলাল হোসেন চৌধুরী

দুর্নীতির অভিযোগে যার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেই সদস্য বেলাল হোসেন চৌধুরী ইন্দোনেশিয়ায় প্রশিক্ষণের সরকারি আদেশ (জিও) ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি দেশত্যাগ করার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

ভ্রমণ নথি অনুযায়ী, বেলাল হোসেন চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়ার সিডনির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। অথচ তার সরকারি আদেশটি ছিল ইন্দোনেশিয়ায় একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার জন্য। ওই একই জিওতে থাকা এনবিআরের আরও ১০ জন কর্মকর্তা শনিবার সকালে সরাসরি ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন।

আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বেলাল হোসেন চৌধুরীর দেশত্যাগের কথা বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুক পেজ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বেলাল চৌধুরী দেশত্যাগের আগে আদালতের অনুমতি নিয়েছেন। তবে ইন্দোনেশিয়ার জিও ব্যবহার করে তিনি কীভাবে অস্ট্রেলিয়ায় গেলেন, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বছরের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার একটি আদালত বেলাল হোসেন চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। দুদকের আবেদনে বলা হয়, 'অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে দেশে ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে প্রচুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তাছাড়া তিনি তার ভাইসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডেভেলপার, রিয়েল এস্টেট কোম্পানিসহ শেয়ার বাজারে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছেন মর্মে তথ্য পাওয়া যায়।'

'অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানা যায় যে, বেলাল হোসাইন চৌধুরী সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশ ত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাই তার বিদেশযাত্রা রোধে আদালতে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।'

নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) তাকে অন্তত দুবার বিদেশ সফরের জিও দেয়। এর মধ্যে একটি ছিল ১৭ জুলাই জাপানে এবং অন্যটি ১১ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়ায় 'ডেটা সেন্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিপোর্টিং' শীর্ষক প্রশিক্ষণের জন্য।

বেলালের আইনজীবী মোহাম্মদ জামাল হোসেনের দাবি, দুটি সফরের জন্যই তিনি আদালত থেকে অনুমতি নিয়েছেন। তিনি বলেন, 'গত ৯ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালত তার ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা দুই মাসের জন্য স্থগিত করেন। ফলে তার বিদেশ ভ্রমণে আইনি বাধা ছিল না।'

শনিবার চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। উপস্থিত অন্য সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি দ্রুত অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।

ইন্দোনেশিয়া সফরের ব্যয় বহনকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্টার টেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, 'এনবিআরের সঙ্গে তিন বছর আগে নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী এই প্রশিক্ষণের ব্যয় আমরা বহন করছি।'

মাহবুব আলম আরও বলেন, 'বেলাল সাহেব সকালে ফোন করে জানিয়েছেন, তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ায় আছেন এবং রোববার দলের সঙ্গে যোগ দেবেন।'

বেলাল হোসেন ছাড়া বাকি সবাই ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছেন বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

তবে এনবিআরের একটি সূত্র জানিয়েছে, বেলাল হোসেনের অস্ট্রেলিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার পর এনবিআর চেয়ারম্যান তাকে দেশে ফিরতে অথবা দ্রুত ইন্দোনেশিয়ায় প্রশিক্ষণে যোগ দিতে বলেন।

একাধিকবার চেষ্টা করার পর শনিবার রাতে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে বেলাল হোসেন চৌধুরীর কথা বলা সম্ভব হয়। তিনি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, 'আমি এখন বাংলাদেশ থেকে আগত দলের সঙ্গে আছি। আমার হাতে সময় থাকায় অস্ট্রেলিয়ায় কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছি। বালি যাওয়ার সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় আমি অস্ট্রেলিয়া হয়ে যাব, তাই আলাদা জিওর প্রয়োজন মনে করিনি।'

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্তাধীন একজনকে বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দেওয়াটাই একটি অপরাধ। যারা এই অনুমতি দিয়েছেন, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।'

তিনি আরও বলেন, 'যেখানে একজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত চলছে এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ছিল, সেখানে আদালতের অনুমতি পাওয়ার মাত্র দুই দিনের মধ্যে জিও জারি করা হয়েছে। এটি দুর্নীতিকে উৎসাহিত করার শামিল।

তার অস্ট্রেলিয়া সফরের উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখারও দাবি জানান ড. ইফতেখারুজ্জামান।

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

2h ago