জব্দ গাড়িতে জব্দ খেলার মাঠ

ছবি: স্টার

বছরের পর বছর পেরোয়, একের পর এক গাড়ি আসে-যায়, দিনের পর দিন দেওয়া হয় আশ্বাস। কিন্তু, মিরপুর-১-এর গোলারটেক খেলার মাঠ আর দখলমুক্ত হয় না।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দারুস সালাম থানা জব্দকৃত গাড়ি দিয়ে দখল করে রেখেছে এই মাঠের একাংশ।

চার একরের এই মাঠটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন সবচেয়ে বড় খেলার মাঠ। স্থানীয়ভাবে এটি 'গোলারটেক মাঠ' নামে পরিচিত।

২০০৮ সালের ২৩ আগস্ট মিরপুর থানা থেকে আলাদা করে দারুস সালাম থানাসহ সাতটি নতুন থানা গঠিত হয়।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, দারুস সালাম থানা প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর থেকে জব্দকৃত যানবাহন এনে গোলারটেক মাঠ ভর্তি করতে শুরু করে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তারা এই মাঠটিতে জব্দ করা গাড়ি রেখেই চলেছে।

ডিএনসিসি প্রশাসন ও স্থানীয়রা বারবার মাঠটি যানবাহনমুক্ত করার দাবি জানালেও পুলিশ তা বাস্তবায়ন না করে কেবল আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মামলার প্রয়োজনেই জব্দকৃত গাড়িগুলো তাদের রাখতে হয়। থানার নিজস্ব কোনো জায়গা না থাকায় এই মাঠে রাখা হচ্ছে। বিকল্প জায়গা পেয়ে গেলেই তারা যানবাহনগুলো সরিয়ে নেবে।

পুলিশ আরও জানায়, তারা সিটি করপোরেশনকে জমি দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো জায়গা বরাদ্দ পায়নি।

সাম্প্রতিক পরিদর্শনে দেখা যায়, মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে ১০টিরও বেশি ট্রাক, প্রায় এক ডজন বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মিনিবাস, প্রাইভেট কার, পিকআপ ভ্যান, হিউম্যান হলার, মোটরসাইকেল ও রিকশা রয়েছে। সবমিলিয়ে সেখানে রয়েছে ৫০টিরও বেশি যানবাহন।

মাঠের আরেকপাশে জিবিএইচবি ক্লাব ও সূচনা সমবায় সমিতির অফিস। সেখানে একটি বড় অংশ জাল দিয়ে ঘিরে স্থায়ী ব্যাডমিন্টন কোর্ট করা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা অমৃতা রায় বলেন, 'গাড়ির কারণে মাঠের এই পাশে কেউ খেলতে আসতে পারে না। ছয়-সাত বছর ধরে এই গাড়িগুলো দেখছি। কার কাছে অভিযোগ করব? কী লাভ হবে?'

গত এক বছর ধরে মাঠের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন আনসার সদস্য বলেন, 'গাড়িগুলো দারুস সালাম থানার।'

মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ রাকিব এই মাঠে খেলতে আসেন। তিনি বলেন, 'মিরপুরে আর তেমন কোনো খেলার মাঠ নেই। কিন্তু এখানে দেখেন, যে পুলিশের জনগণের বন্ধু হওয়ার কথা, তারাই আমাদের খেলার মাঠটাও দখল করে নিয়েছে। তাহলে যাব কোথায় আমরা? আমরা খেলার জন্য মাঠ চাই।'

সেন্ট জোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র আলতাফ হোসেন বলেন, 'থানা হওয়ার পর থেকে একের পর এক গাড়ি এই মাঠে ঢুকতে শুরু করে। এটি তো খেলার মাঠ, পুলিশের সম্পত্তি না। দারুস সালাম জোনের সহকারী কমিশনারের অফিসের কাছেই জায়গা আছে। সেখানেও গাড়িগুলো রাখতে পারে। আমাদের মাঠে কেন?'

যোগাযোগ করা হলে মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাকসুদুর রহমান বলেন, 'এই গাড়িগুলো পুলিশের সম্পত্তি না। বিভিন্ন মামলায় জব্দ করা এসব গাড়ি বিচারকাজ শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত রাখতে হয়। এটা আদালতের বিষয়।'

তিনি বলেন, 'আমাদের থানার কার্যক্রমও চলছে ভাড়া বাড়িতে। থানার নিজস্ব জায়গা নেই। তাই গাড়িগুলো এখানে রাখতে বাধ্য হচ্ছি। আমাদের জন্য জমি বরাদ্দ দিলে, থানাটি নিজস্ব জায়গায় চলে গেলে আর সমস্যা হবে না।'

ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ আজাজ বলেন, 'আমরা মাঠ থেকে তাদের ডাম্পিং স্টেশনটি সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে থানাকে অবহিত করেছি। আলোচনা চলছে। আশা করি শিগগির এ বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেব।'

তিনি বলেন, 'পুলিশ মাঠ থেকে যানবাহনগুলো সরিয়ে নেওয়ার পর পুরো খেলার মাঠটি সংস্কার করব।'

Comments

The Daily Star  | English
charges against Sheikh Hasina at ICT

ICT case against Hasina: Verdict date could be set tomorrow

State-appointed defence counsel for the absconding accused concluded arguments today

36m ago