তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, ৪ জেলায় বন্যার আশঙ্কা

পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী এলাকায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সন্ধ্যায় ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়। এতে নিম্নাঞ্চলে পানির প্রবাহ বেড়ে চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিচু জমি তলিয়ে যায়।

লালমনিরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সূত্রে জানা গেছে—লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও নীলফামারীতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই তিস্তার পানি চর ও নিম্নাঞ্চলে ঢুকতে শুরু করেছে। অনেক জায়গা এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে। বিকেলে বৃষ্টি থামলেও উজানের পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় নদীর পানি বাড়ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, উজানের চাপ কমাতে ব্যারাজের সব গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে এর ফলে নিম্নাঞ্চলে পানির প্রবাহ আরও বেড়েছে। তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় বন্যার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

কুড়িগ্রামে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রকিবুল হাসান জানান, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা, গঙ্গাধর ও জিঞ্জিরাম নদীর পানি বাড়ছে। যদিও এখনো এগুলো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তবে দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে। রোববার কুড়িগ্রামে ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই তিস্তার পানি নদী তীরবর্তী এলাকায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

হাতীবান্ধার চর গড্ডিমারীর কৃষক মকসেদ আলী বলেন, 'সন্ধ্যা থেকে তিস্তার পানি আমাদের ঘরে ঢুকে পড়েছে। আমার ছয় বিঘা জমির আমন ধান পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। যদি দ্রুত পানি না নামে, বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ব।'

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চর মোহিপুর গ্রামের কৃষক হযরত আলী বলেন, 'পানি আমাদের চরাঞ্চলে ঢুকতে শুরু করেছে। এভাবে চলতে থাকলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুরো চর তলিয়ে যাবে। বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত নদীর পানি নামবে না, বরং আরও বাড়বে।'

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, জেলা প্রশাসন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তিস্তা তীরবর্তী এলাকাগুলো বন্যার ঝুঁকি রয়েছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।

Comments