দেশে তামাক ব্যবহার কমলেও এখনো আঞ্চলিক গড় থেকে বেশি

তামাক সেবনের হার গত দেড় দশকে কমলেও এখনো বৈশ্বিক ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক গড় থেকে বেশি বাংলাদেশে।

সোমবার প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর দেশে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী আনুমানিক ৩ কোটি ৭১ লাখ মানুষ বিভিন্ন তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে ধূমপান করেছেন ১ কোটি ৯৭ লাখ।

২০২৫ সালে একই বয়সীদের মধ্যে তামাক সেবনের প্রবণতা দাঁড়িয়েছে ৩১.৪ শতাংশে, যা ২০১০ সালে ছিল ৪৪.২ শতাংশ।

বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল এ বছরের মধ্যে তামাক সেবনের হার ২৯ শতাংশে নামিয়ে আনা। অর্থাৎ এখনও লক্ষ্য থেকে ২.৪ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে দেশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এই বছরের মধ্যে তামাক সেবনের হার ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারবে। তবে, তামাকবিরোধী কাজে সম্পৃক্তরা বলছেন, বাস্তবে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখনও অনেক বেশি হওয়ায় এই হার আরও কমানো চ্যালেঞ্জিং হবে।

২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ হওয়ার লক্ষ্য রয়েছে বাংলাদেশের।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ২০১০ সালে তামাক ব্যবহারকারীর ভিত্তি অনুমান ছিল অনেক বেশি—৪৪.২ শতাংশ। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের কারণে গত দেড় দশকে এই হার কমেছে।

তারপরও বর্তমানে তামাক সেবনের হার বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক গড়ের চেয়ে বেশি। শক্তিশালী তামাকবিরোধী আইনসহ বহুমুখী সরকারি উদ্যোগ ছাড়া এই হার কমানো কঠিন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাক ব্যবহারে চারটি প্রধান অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ে। সেগুলো হলো—হৃদরোগ, শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ক্যানসার ও ডায়াবেটিস।

২০১৯ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির একটি গবেষণা অনুসারে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক সেবনের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।

বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী তামাক সেবনের গড় ১৯.২ শতাংশ হতে পারে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। ২০১০ সালে এই হার ছিল ২৬.২ শতাংশ।

প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, বিশ্বব্যাপী তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০০০ সালে ছিল ১.৩৮ বিলিয়ন, যা কমে ২০২৪ সালে ১.২ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।

দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে তামাক সেবনের গড় এ বছরের জন্য প্রাক্কলন করা হয়েছে ২২.৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অঞ্চলের ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নীচের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের নিচে রয়েছে কেবল মিয়ানমার (৪২.৫ শতাংশ) ও পূর্ব তিমুর (৪৮.৯ শতাংশ)।

এ বছর ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় তামাক সেবনের হার যথাক্রমে ২১.৯, ২৮ ও ২০.৪ শতাংশ হওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো-ফ্রি কিডসের অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার আতাউর রহমান বলেন, 'বিড়ি ও সাদা পাতার মতো কিছু ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমায় সামগ্রিকভাবে তামাক সেবনের হার কমেছে।'

তবে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য উল্লেখ করে বলেন, 'সম্প্রতি সিগারেট বিক্রি বেড়েছে। কাজেই তামাক সেবনের হার আরও কমানোর ক্ষেত্রে এটা একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে।'

তামাক সেবনের হার কমলেও দেশে প্রকৃত তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। ফলে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক-মুক্ত জাতির লক্ষ্য অর্জন করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে গেলে একটি দেশকে 'তামাক-মুক্ত' দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আতাউর রহমান বলেন, 'এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকারকে তামাকের কর ও মূল্য কার্যকরভাবে বাড়াতে হবে, তামাকবিরোধী আইন আরও কঠোর করতে হবে এবং সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সেইসঙ্গে তামাক ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Officials for polls duty: BNP to oppose hiring from select entities

Party will ask EC not to pick people from Islami Bank, Al-Arafah Islami Bank, Islami Bank Hospital, Ibn Sina Trust

9h ago