অ্যানথ্রাক্স আতঙ্কে রংপুরে কমেছে পশু বিক্রি, ক্ষতির মুখে খামারি-কৃষকেরা

রংপুরে অ্যানথ্রাক্স আতঙ্কে কৃষকেরা। ছবি: এস দিলীপ রায়

রংপুরের পীরগাছা, কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স আতঙ্কের কারণে পশু ও মাংসের বিক্রি ব্যাপকভাবে কমেছে। এ পরিস্থিতিতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় খামারি ও কৃষকেরা। 

স্থানীয় হাটগুলোতে গরু কিনতে আগ্রহী পাইকাররা এখন বাইরে থেকে আসছেন না। তিন উপজেলায় গরুর দামও কমে গেছে। কম দামে গরু বিক্রি করতে অনিচ্ছুক খামারিরা অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। তবে প্রাণীসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আতঙ্কের কিছু নেই।

প্রাণীসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে পীরগাছা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১০০টি গরু মারা গেছে। কিন্তু স্থানীয়দের মতে, মারা যাওয়া গরুর সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি।

প্রথমে পীরগাছার কয়েকটি গ্রামে অ্যানথ্রাক্স দেখা দেয়। কিছুদিন পর তা আশেপাশের আরও কয়েকটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় দেড় মাসের মধ্যেই কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলাতেও অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে। 

তবে এ দুই উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সের কারণে গরুর মৃত্যুর কোনো ঘটনা ঘটেনি। আগস্টের মাঝামাঝি থেকে পীরগাছা উপজেলায় প্রাণীসম্পদ বিভাগের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়।

পীরগাছা উপজেলার পারুল গ্রামের খামারি মেহের আলী জানান, প্রথমে গরু, পরে মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হওয়ার পর স্থানীয়রা গরুর মাংস খাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই কসাইয়েরাও এখন তেমন গরু জবাই করছেন না। তার খামারে ১২টি গরু আছে। এর মধ্যে পাঁচটি বিক্রয়যোগ্য, কিন্তু ক্রেতা না থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না। ক্রেতা পেলেও দাম কম।

চৌধুরানী এলাকার খামারি গণেশ চন্দ্র সেন জানান, অ্যানথ্রাক্স আতঙ্কে আছেন স্থানীয়রা। আতঙ্ক না কমা পর্যন্ত ন্যায্য দামে গরু বিক্রি সম্ভব হবে না। তাই খামারিরা এখন লোকসানের মধ্যে পড়ছেন। বর্তমানে বাইরে থেকে পাইকাররাও আসছেন না।  

কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর গ্রামের কৃষক নরেশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, 'আমার তিনটি গরু আছে, একটি বিক্রি খুব জরুরি। হাটে নিলে দাম কম হওয়ায় গরুটি বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছি। অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক চারদিকে ছড়িয়ে গেছে। অনেকেই এখন গরু পালন করতে অনীহা প্রকাশ করছেন।'

মাইটাল গ্রামের মুদি দোকানি হযরত আলী বলেন, 'অ্যানথ্রাক্স পশু ও মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় আগস্ট মাস থেকে আমার পরিবার মাংস খাওয়া বন্ধ করেছে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখন গরুর মাংস খাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে আমরা অ্যানথ্রাক্স মোকাবিলায় সচেতন হয়েছি, আমি নিজেও মানুষকে সচেতন করছি।'

পীরগাছা এলাকার কসাই মিজানুর রহমান বলেন, 'অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হওয়ার আগে প্রতিদিন তিনটি গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করতাম। এখন একটি গরু জবাই করছি, তবুও অনেক মাংস বিক্রি হচ্ছে না। ভয়ঙ্কর এই রোগের কারণে আমিও আতঙ্কিত। শুধু সুস্থ গরু জবাই করছি। বাজারে মাংসের চাহিদা কম হওয়ায় আমিও খামারিদের কাছ তেমন গরু কিনছি না।'

কাউনিয়ার গরুর পাইকার ছকমল হোসেন বলেন, 'অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাইরে থেকে পাইকার আসছেন না। স্থানীয় পাইকাররা কৃষকদের কাছ থেকে গরু কিনলেও তা বিক্রি করতে পারছেন না। আমরা সুস্থ-সবল গরু কিনছি, কিন্তু আগের তুলনায় দাম কিছুটা কম।'

পীরগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ইউএলও) একরামুল হক বলেন, 'শুধু কৃষকদের সচেতনতাহীনতার কারণে উপজেলার প্রায় শতাধিক গরু মারা গেছে। বিষয়টি জানার পর দ্রুত টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এর পর থেকে আর গরু মারা যায়নি। আমরা টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। এ পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৪০০টি ভ্যাকসিন বরাদ্দ পেয়েছি, আরও ৫০ হাজার ভ্যাকসিনের চাহিদা দেওয়া হয়েছে।'

রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ডিএলও) আবু ছাইদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রংপুর জেলায় প্রায় ১৩ লাখ গবাদি পশু রয়েছে। ২৬ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত এক লাখ ৮০ হাজার পশুকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে। নতুন কোনো আক্রান্ত পশু পাওয়া যায়নি। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। মসজিদ, মন্দির ও হাট-বাজারে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় যত্রতত্র পশু জবাই ও মাংস বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে আমাদের ১২টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

7h ago