যানজটে ২ ঘণ্টায় ৫০ মিটার, গাড়ি ছেড়ে মোটরসাইকেলে চাপলেন সেতু উপদেষ্টা

মোটরসাইকেলে চেপে গন্তব্যে যাচ্ছেন উপদেষ্টা

নিজের চোখে দেখতে এসেছিলেন সড়কের অবস্থা। কিন্তু দেখার শুরুটা হলো যানজটে আটকা পড়ে। আজ বুধবার সড়কে যানজটে আটকা পড়েন পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেনে ভৈরব রেলওয়ে জংশনে নামেন তিনি। পরিকল্পনা ছিল, সেখান থেকে সড়কপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও সরাইলের বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত চার লেন ও ছয় লেন সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের অগ্রগতি দেখা।

ভৈরব থেকে গাড়িতে করে রওনা হয়ে তিনি প্রথমে আশুগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকা পরিদর্শন করেন। এরপর সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সরাইল বিশ্বরোডের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। 

কিন্তু কিছুদূর এগোতেই শুরু হলো দুর্ভোগের প্রকৃত চিত্র— সোহাগপুর এলাকায় তার গাড়িবহর থেমে যায় দীর্ঘ যানজটে। পাশে আটকা পড়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ কর্মকর্তাদের গাড়িও।

দেড় কিলোমিটার এগোতে সময় লেগে যায় তিন ঘণ্টারও বেশি। সোহাগপুর এলাকায় মাত্র ৫০ মিটার যেতেই কেটে যায় সোয়া দুই ঘণ্টা। অবশেষে উপদেষ্টা গাড়ি ছেড়ে নামেন এবং মোটরসাইকেলে চড়ে রওনা হন সরাইল বিশ্বরোডের দিকে। দুপুর ১টা ৫ মিনিটে তিনি পৌঁছান পরিদর্শনস্থলে।

উপদেষ্টাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল চালকের মাথায় হেলমেট ছিল না। আশপাশের কয়েকটি মোটরসাইকেলেও চালক ও যাত্রীদের মাথায় হেলমেট দেখা যায়নি। তবে উপদেষ্টা হেলমেট পরে চালকের পেছনে বসেন।

উপদেষ্টার সফরের আগেই আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল-বিশ্বরোড পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশে গত কদিন ধরে তীব্র যানজট চলছে। দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দ, অসমতল সড়ক ও চলমান চার লেন সম্প্রসারণ কাজের ধীরগতির কারণে এই মহাসড়ক এখন যাত্রীদের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

হাজার হাজার যাত্রী ও গাড়িচালকের অনেক সময় দিন পেরিয়ে রাত কাটাতে হচ্ছে সড়কের ওপরই। শ্যামলী পরিবহনের যাত্রী সঞ্জয় পোদ্দার বলেন, 'গতকাল রাত দেড়টার দিকে ঢাকার ফকিরাপুল থেকে সুনামগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলাম। আজ দুপুর একটা পর্যন্ত সরাইল-বিশ্বরোড পার হতে পারিনি। সারা রাত গাড়িতে বসে থেকেছি।'

হানিফ পরিবহনের আরেক যাত্রী মুছা সরকার বলেন, 'রাত ২টায় ঢাকা থেকে বাসে উঠেছিলাম, সকাল পর্যন্ত একই জায়গায় বসে আছি। আমাদের এই কষ্ট কেউ বোঝে না।'

বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে হবিগঞ্জের মাধবপুর পর্যন্ত প্রায় ৩৪ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সারি লেগে আছে। শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই যানজট চতুর্থ দিনেও কমেনি।

যানজটে আটকে থাকা পণ্যবাহী ট্রাকের চালক রমজান মিয়া মুচকি হেসে বললেন, 'আজ উপদেষ্টাও বুঝলেন, এই সড়কে আমরা কেমন কষ্টে চলি। তিনি আজ ভোগান্তির বাস্তব ক্লাস করলেন।'

পাশে থাকা আরেক ট্রাকচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'সারা রাত ট্রাকে বসে আছি, এক কিলোমিটার যেতে তিন ঘণ্টা লেগে গেল। গরমে শরীর পুড়ছে, খাবার-পানি কিছুই পাওয়া যায় না। পুলিশও কিছু করতে পারছে না। রাস্তা এমন খারাপ যে, ক্লাচ-প্যাডেলে পা রাখতেও কষ্ট হয়। এখন শুনছি উপদেষ্টাও আটকা পড়েছেন— অন্তত নিজের চোখে দেখে যাক, আমরা কী কষ্টে এই রাস্তায় দিন কাটাই।'

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মূলত সড়কের খারাপ অবস্থার কারণেই যানজট তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। হাইওয়ে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে, কিন্তু সড়ক পুরোপুরি সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত দুর্ভোগ কমবে না।

সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন মিলে যানজট নিরসনে মাঠে কাজ করছে। 

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

2h ago