অভিযান শেষ করতে আরও সময় লাগবে, আশপাশের এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ: ফায়ার সার্ভিস

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক কারখানা ও কেমিক্যাল গোডাউনে অনুসন্ধান অভিযান শেষ করতে আরও সময় লাগবে। ভবনের কাঠামোগত ক্ষতি এবং ভেতরে থাকা রাসায়নিক পদার্থের ঝুঁকির কারণেই এ সময় লাগছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এছাড়া ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকা এখনও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ সেখানে কেমিক্যালের ধোঁয়া ও বিকিরণের মতো গ্যাস নির্গত হচ্ছে। এই পদার্থগুলো মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
আজ বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থলে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৪০মিনিটের দিকে আগুন লাগে। দুই দফায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। প্রথমে পোশাক কারখানার অংশে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়, যা পরে 'আনোয়ার গার্মেন্টস' হিসেবে শনাক্ত হয়। এরপর সংলগ্ন কেমিক্যাল গোডাউন আলম ট্রেডার্সের আগুন আজ দুপুর ২টা ২০মিনিটে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
তাজুল ইসলাম বলেন, পুরো গোডাউনে ছয় থেকে সাত ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ছিল। সেগুলোর প্রকৃতি ও সম্ভাব্য ঝুঁকি এখনো মূল্যায়ন করছে ফায়ার সার্ভিস।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা ধাপে ধাপে ও নিয়ন্ত্রিতভাবে পানি ব্যবহার করে কেমিক্যালগুলো অপসারণ করছি। কাজটি সময়সাপেক্ষ হলেও নিরাপত্তার স্বার্থে এটি অত্যন্ত জরুরি।
ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, টঙ্গীর মতো কেমিক্যাল বিস্ফোরণের ঘটনা যেন আবার না ঘটে, সে জন্য আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। আমরা ধাপে ধাপে, সর্বোচ্চ সতর্কতা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ড্রোন ফুটেজে দেখা গেছে, আগুনের তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী তাপে আলম ট্রেডার্সের ভবনটি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনের অনেক কলাম ও স্তম্ভে ফাটল দেখা দিয়েছে। এটি কাঠামোগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। হঠাৎ ধসে পড়লে আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক আরও বলেন, এই কারণে অনুসন্ধান অভিযান চালানোর আগে আমরা সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি। অভিযান শেষ করতে আরও ৩৬ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আলম ট্রেডার্সের প্রধান ফটকটি বন্ধ অবস্থায় পান।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল বলেন, আমরা হাইড্রোলিক স্প্রেডার ও কাটার ব্যবহার করে গেটটি খুলেছি। তখন হয়তো ভেতরে কেউ ছিল না, তবে অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকা এখনও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ সেখানে কেমিক্যালের ধোঁয়া ও বিকিরণের মতো গ্যাস নির্গত হচ্ছে। এই পদার্থগুলো মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
'৩০০ থেকে ৫০০ গজ দূর থেকেও এসব ধোঁয়া মারাত্মক শারীরিক প্রভাব ফেলতে পারে। পুরো এলাকা অনিরাপদ, মানুষকে এখান থেকে দূরে থাকতে হবে', যোগ করেন তিনি।
তাজুল ইসলাম বলেন, ফায়ার সার্ভিস এরই মধ্যে মাইকিং ও স্থানীয় মসজিদের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল বলেন, আমাদের পরিদর্শকরা বৈধ ও অবৈধ দুই ধরনের কেমিক্যাল গোডাউনের তালিকা করছেন। আমরা অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়ন্ত্রণহীন কার্যক্রম শনাক্ত ও ব্যবস্থা নিচ্ছি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের দুর্যোগ শুধু ফায়ার সার্ভিস একা ঠেকাতে পারবে না। এটি একটি সামাজিক সমস্যা এবং কেবল সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমেই পরিবর্তন আনা সম্ভব। প্রশাসন, স্থানীয় জনগণ ও ব্যবসায়ী সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধে।
Comments