আজকে এই দিন সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে: প্রধান উপদেষ্টা

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের আজকে এই দিন সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলো অসম্ভবকে সম্ভব করেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'তারা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে। তাদের নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে। লোকে চিন্তা করবে তারা কীভাবে এটা করেছিল।'
আজকে এই দিনটি মহান দিন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'এটার কথা চিন্তা করলে গা শিহরে ওঠে, এমন একটি দিন। সেটা শুধু জাতির জন্য না, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায় সেটা পাঠ্যপুস্তকে থাকবে। ক্লাস রুমে আলোচনা হবে। রাজনীতিবিদদের মধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা হবে বিভিন্ন দেশে—কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, তারা কী বললো, আমরা কী চাই। তারা চেষ্টা করে দেখবে তাদের দেশে সেটা সম্ভব কি না। যে উদাহরণ আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা সৃষ্টি করেছেন, সেটা দেশের জন্য তো বটেই, সারা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।'
গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের কথা স্মরণ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'তাদের কাছে জাতি চির কৃতজ্ঞ থাকবে।'
'আমরা পুরোনো কথাবার্তা সব পাল্টে ফেলে নতুন কথাগুলো আমাদের জাতীয় জীবনে নিয়ে আসলাম। আমাদের সংবিধানের পরিবর্তনের মধ্যে নিয়ে আসলাম। সরকার চালানোর ভেতরে নিয়ে আসলাম। অনেক বিষয় এসেছে এই পরিবর্তনের ভেতরে। এই পরিবর্তন এখন আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা সেই পথে অগ্রসর হবো। আমাদের জন্য আজকে নবজন্ম। আমাদের নবজন্ম হলো আজকে। এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম,' যোগ করেন তিনি।
এই দেশ তরুণদের দেশ, তারাই পথ দেখাবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'এখানে ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেক মানুষ হলো ২৭ বছরের নিচে। এটাই আমাদের সম্পদ। সারা দুনিয়া অবাক বিস্ময়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, কখন আমরা তাদের সাহায্য করব এই তরুণদের পাঠিয়ে। কারণ সারা দুনিয়াতে তরুণদের অভাব। কোনো কোনো দেশে তরুণ নেই বলতে গেলে! কাজেই তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।'
তিনি আরও বলেন, 'শুধু বাংলাদেশ না, পৃথিবীকে পরিবর্তন করার সুযোগ তাদের কাছে এসেছে। আমাদের কাছে দরখাস্ত আসছে, আমাদের কাছে এত জন পাঠান। আমাদের কাছে যত পারেন পাঠান। এটা তো ২০২৫ সালের কথা, ২০২৬ সালে কী বলবে? ২০২৭ সালে কী বলবে? হাত জোড় করে করে আসবে। কারণ আমাদের তরুণরা ছাড়া পৃথিবীতে এত তরুণ দিতে পারে, এত তাজা শক্তি দিতে পারে, এত সৃজনশীল মানুষ দিতে পারে, এত বিশ্বস্ত মানুষ দিতে পারে—দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না।'
'কাজেই সেই দেশকে গঠন করার দায়িত্ব আগামী সরকারকে নিতে হবে। পরবর্তী সরকারগুলোকে নিতে হবে। সেটার জন্য প্রস্তুতি হচ্ছে আমাদের সনদ। এই সনদের মাধ্যমে আমরা আরেকটি বড় কাজ করলাম, আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় আসলাম। আমরা এক বর্বর জগতে ছিলাম, যেখানে আইন-কানুন ছিল না। মানুষ যা ইচ্ছা তা করতে পারতো। এখন আমরা সভ্যতায় আসলাম এবং এমন সভ্যতা আমরা গড়ে তুলব মানুষ ঈর্ষার চোখে আমাদের দেখবে। কাজেই সেটা সনদ পরবর্তী জীবন আমরা কীভাবে গঠন করব তার ওপর নির্ভর করবে,' যোগ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আমাদের ভবিষ্যত অত্যন্ত চমৎকার। শুধু আমাদের সমাজটাকে গঠন করতে পারলেই হলো। আজকে বুঝতে পারলাম, আমরা যদি একমত হই, যেভাবে আমরা হতে পেরেছি, অন্য সব কাজে আমরা যদি একমত হই, এক পথে চলি, তাহলে আমাদের দেশ অনন্য দেশে পরিণত হবে।'
এ সময় তিনি গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নতকরণ ও সমুদ্রসম্পদ ব্যবহারের তাগিদ দেন।
ঐকমত্যে পৌঁছাতে কী কী বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে তা তরুণদের জানাতে পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'তারা যেন দেখে তাদের নেতারা তাদের বিষয়গুলো কীভাবে বিবেচনা করছেন। কীভাবে সিদ্ধান্তে আসছেন। তারা যেন অনুপ্রাণিত হয়। আজকে শুধু অনুষ্ঠান না, সারা জাতি এটা থেকে অনুপ্রাণিত হবে। নতুন পথের দিশা পাবে। আমরা ছোট জাতি না, কারও দয়া-দাক্ষিণ্যে বেঁচে থাকার জাতি না, আমরা কারও কথার তলে থাকি না, আমরা আমাদের মতো চলি, মাথা উঁচু করে চলি এবং সারা দুনিয়াতে আমরা মাথা উঁচু করে চলবো। সেই সামর্থ্য আমাদের আছে।'
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'আমরা অন্য দেশকে দেবো। আমাদের সেই সামর্থ্য আছে। অন্য দেশ আমাদের কাছে শিখবে। সেই সামর্থ্য আছে। আজকে যে সনদ সই হলো, এটা বহু দেশ শিখতে আসবে। এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে আপনাদের বলে রাখলাম। এই যে একটা উদাহরণ সৃষ্টি করলেন, এ রকম আরও বহু উদাহরণ আমরা সৃষ্টি করতে পারি। সেই পথে আমরা যেন যাই। আমরা একটা মহান জাতি। এটা অনুভব করতে হবে। কেউ যেন আমাদের ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে না পারে। আমাদের দেখলে সম্মান করে। মাথা নিচু করে থাকে।'
'এখনো তারা চিন্তা করে, এত কিছু তোমরা কীভাবে করল! অভ্যুত্থান করল, এত বছরের সরকারকে ফেলে দিলো, পালিয়ে গেল সরকার, একটা নতুন সরকার করল, একটা নতুন সনদ করল, এত কিছু করল তারা! এটাই অবাক বিস্ময়ে তাকাচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।
Comments