কুকুর হত্যার অভিযোগ এলাকাবাসীর, অস্বীকার পৌর কর্তৃপক্ষের

গোপালগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার সড়কে থাকা বেওয়ারিশ কুকুর হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।
তাদের দাবি, একদল লোক শহরের বিভিন্ন সড়কে ঘুরে ঘুরে পথের কুকুর ধরে হত্যা করছে।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ভোরে ও রাতে পৌরসভার লোকজন নেট দিয়ে কুকুর ধরে বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে ছোট ময়লার গাড়িতে করে নিয়ে যায়।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে গোপালগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, কুকুর হত্যার ঘটনার সঙ্গে পৌরসভার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়।
তবে গোপালগঞ্জ পৌরসভার নবীনবাগ এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম ফেসবুকে আরডিএক্স রবিউল অ্যাকাউন্ট থেকে গত পরশু একটি পোস্টে লেখেন, 'দয়া করে গোপালগঞ্জ শহরের কুকুরগুলো মারা বন্ধ করেন, এই পৃথিবীতে সবার বাঁচার অধিকার আছে।'
গতকাল সোমবার কুকুর নিধনের দুটি ছবি ও দুটি ভিডিও পোস্ট করে লেখেন, 'কে আমার পাশে দাঁড়াবেন? … কুকুর হত্যা চলছে গোপালগঞ্জের প্রতিটি জায়গায়!'
ছবিতে দেখা যায়, ময়লার ভ্যানের ভেতরে পড়ে আছে কয়েকটি কুকুর ও একটি নেট।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কুকুরের আশেপাশে নীল টি-শার্ট পরা দুজন লোক নেট নিয়ে ঘুরছেন, একটু দূরে ময়লার ভ্যান।
জানতে চাইলে রবিউল আজ মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল ভোরে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হই। সদর হাসপাতালের সামনে দেখি পৌরসভার লোকজন নেট দিয়ে কুকুর ধরছে এবং ইনজেকশন পুশ করে মেরে ফেলছে। সে সময় সেখানে পৌরসভা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কয়েকজন লোক উপস্থিত ছিলেন।'
'পরে মৃত কুকুরগুলো পৌরসভার ময়লার গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি ঘটনাটির ছবি ও ভিডিও ধারণ করে আমার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করি,' বলেন তিনি।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে জানান, 'গত ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গোপালগঞ্জ এস এম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পৌরসভার লোকজন দুটি কুকুর ধরেছিল। কুকুরগুলোকে নেট দিয়ে আটকানোর পর ইনজেকশন প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোপালগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক বিশ্বজিৎ কুমার পাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কুকুর নিধনের বিষয়ে পৌরসভা এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তবে পৌরবাসীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযোগ এসেছে যে, শহরে কুকুরের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়নি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জনের সঙ্গে আলোচনা করছি। কোনো ব্যবস্থা নিলে তা অবশ্যই আইনগতভাবে করা হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে ছবিগুলো ছড়ানো হয়েছে, সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।'
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সরদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুধু কুকুর নয়, অন্য কোনো প্রাণী হত্যা করাও আইনত দণ্ডনীয়। কোনো সংস্থা যদি এমন কাজ করে থাকে, সেটি আইনের আওতায় পড়বে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ কখনোই এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে না।'
এ প্রসঙ্গে প্রাণিকল্যাণ সংগঠন 'অভয়ারণ্য অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন' এর প্রতিষ্ঠাতা রুবাইয়া আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা গোপালগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে এই কাজটি পৌরসভার নয়, কোনো বহিরাগত করেছে। তিনি এ বিষয়ে অবগত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন এবং উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন। তবে আমরা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রাণিকল্যাণ আইন অনুযায়ী কুকুর হত্যা বা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া—দুটিই নিষিদ্ধ।'
Comments