লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম: নন-ইউরিয়া সারের ‘কৃত্রিম’ সংকটে বিপাকে কৃষক

প্রতীকী ছবি। ছবি: স্টার

শীতকালীন ফসল মৌসুম সামনে রেখে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে দেখা দিয়েছে নন-ইউরিয়া সার—টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এর তীব্র সংকট। ফলে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষক।

যদিও কৃষি বিভাগ বলছে, ডিলারদের একটি অংশ কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, দুই জেলার জন্য বরাদ্দকৃত নন-ইউরিয়া সার যথেষ্ট পরিমাণে মজুদ রয়েছে লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগর বিএডিসি (বাংলাদেশ এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন) গুদামে।

বিএডিসি লালমনিরহাট গুদামের সহকারী পরিচালক একরামুল হক বলেন, 'কুড়িগ্রামে ১৬৭ জন ও লালমনিরহাটে ১৪৪ জন ডিলারের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত দরে সার বিক্রি হয়। সরকার ডিলারদের কাছে প্রতিকেজি টিএসপি ২৫ টাকা, ডিএপি ১৯ টাকা ও এমওপি ১৮ টাকা দরে বিক্রি করে। ডিলাররা প্রতিকেজিতে ২ টাকা লাভ রেখে কৃষকের কাছে বিক্রি করতে পারেন। সরকার প্রতিকেজি সারে ৫৫ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী সব সার আমাদের গুদামে রয়েছে। ডিলাররা নিয়মমাফিক সার উত্তোলন ও বিক্রি করছেন।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, অক্টোবরে কুড়িগ্রামে টিএসপি বরাদ্দ ১ হাজার ১৮১ মেট্রিক টন, ডিএপি ২ হাজার ৬৯০ মেট্রিক টন ও এমওপি ১ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। লালমনিরহাটে টিএসপি বরাদ্দ ১ হাজার ৭১৫ মেট্রিক টন, ডিএপি ৩ হাজার ২৪২ মেট্রিক টন ও এমওপি ১ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন।

তবে চাহিদার তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ সার কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কর্ণপুর গ্রামের কৃষক আবদার হোসেন (৬৫) বলেন, 'ডিলারদের কাছ থেকে চাহিদামতো সার পাওয়া যায় না। অনেক সময় তারা বলেন, সার শেষ। কিন্তু খুচরা দোকানে গেলে সার পাওয়া যায়। সেখানে প্রতিকেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি দাম দিতে হয়।'

একই অভিযোগ করেন পাটগ্রাম উপজেলার বাউড়া এলাকার কৃষক আবু তালেব (৫৫)। তিনি বলেন, 'নন-ইউরিয়া সার ছাড়া জমি প্রস্তুত করা যাচ্ছে না। ফসল রোপণের মৌসুমে সার না পেলে আমাদের বড় ক্ষতি হবে। নভেম্বরে সারের চাহিদা আরও বাড়বে।'

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সিঙ্গারডাবরী গ্রামের কৃষক মোতালেব হোসেন (৭০) বলেন, 'টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি ছাড়া জমি চাষ করা সম্ভব না। ডিলারদের কাছে সার নেই, কিন্তু খুচরা দোকানে বেশি দামে পাওয়া যাচ্ছে।'

সার ডিলারদের দাবি, তারা চাহিদার তুলনায় কম বরাদ্দ পাচ্ছেন। গুদাম থেকে সার উত্তোলন করে দোকানে আনার এক সপ্তাহের মধ্যেই সব বিক্রি হচ্ছে। কৃষক সার কিনতে এসে না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন। এমনকি অনেক কৃষকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডাও হচ্ছে।

ডিলাররা বলেন, সরকার চাহিদামত সারের বরাদ্দ দিলে এ ধরনের সংকট হতো না।

লালমনিরহাটের হারাটি ইউনিয়নের সার ডিলার আবু তাহের বলেন, 'সরকার যে পরিমাণ সার দেয়, আমরা নির্ধারিত দরে কৃষকের কাছে বিক্রি করি। কেউ বেশি দরে বিক্রি করে না।'

সার বিক্রি করার কথা কৃষকের কাছে। সেই সার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কীভাবে যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'খুচরা বিক্রেতারা কোথা থেকে সার পান, সেটা আমাদের জানা নেই।'

লালমনিরহাট জেলা সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল হাকিম বলেন, 'চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম থাকায় সংকট তৈরি হয়। চরাঞ্চলে এখন প্রচুর জমিতে ফসল উৎপাদন হচ্ছে, ফলে সারের চাহিদাও বেড়েছে। ২০০৯ সালের সার নীতি ঠিক রেখে চাহিদামতো সার সরবরাহ করলে সংকট থাকবে না।'

তিনি বলেন, 'কোনো ডিলার যদি সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন, তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।'

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, 'সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী সারের কোনো সংকট নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার আশায় কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'নতুন সার নীতি চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে এটা কার্যকর হবে। এতে ডিলাররা কৃত্রিম সংকট তৈরির সুযোগ পাবে না।'

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'চরাঞ্চলে এখন এক ইঞ্চি জমিও পতিত থাকে না। ফলে সারের ব্যবহার বেড়েছে। অনেক কৃষক কৃষি বিভাগের পরামর্শ ছাড়াই অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছেন। এতে অধিক পরিমাণে সার ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু কোনো উপকার হচ্ছে না।'

Comments

The Daily Star  | English

Challenges in Policing 1: Police stations buckling under budget strain

The government also supplies police stations with some of the items they request each month, but only a portion of the demand is met.

11h ago