মিডিয়ায় সরকারি বিজ্ঞাপনের রেট দ্বিগুণ হচ্ছে, সাংবাদিকদের বেতন বাড়াতে হবে: তথ্য উপদেষ্টা

তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম (ডানে) ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

পত্রিকার প্রচারসংখ্যা কমিয়ে সরকারি বিজ্ঞাপনের রেট দ্বিগুণ করা হচ্ছে জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, সাংবাদিকদের ন্যুনতম বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

আজ রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা চাইব বিজ্ঞাপনের হার বাড়ুক। কিন্তু এই সুবিধা আমরা দেবো, এর জন্য আমরা সাংবাদিকদের জন্য একটা বেসিক স্যালারি স্ট্রাকচার প্রস্তাব করে যেতে চাই। সাংবাদিকদের যদি এই বেসিক স্যালারি না দেওয়া হয়, তাহলে ওই পত্রিকা আমরা বা আউটলেটকে আমরা এই সুবিধা দেবো না।'

'পত্রিকা মালিক ও সম্পাদকরা যদি ইমিডিয়েটলি এটা বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নেন, তাহলে আমরা এই সংস্কারের দিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করব। কারণ আমরা সরকার থেকে সুবিধা দেবো, জনগণের টাকায় ৯০০ টাকার বদলে ১৮০০ টাকা বিজ্ঞাপন দেবো, কিন্তু আপনি সাংবাদিকদের ন্যায্য বেতন দেবেন না—এতে যে নৈতিক সংকট তৈরি হয় তাতে সাংবাদিকরা এখানে-ওখানে খ্যাপ মারে, রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির মধ্যে ঢুকে যায়। এটা বন্ধের জন্য অবশ্যই সাংবাদিকদের ডিগনিফাইড লাইফ দিতে হবে,' বলেন তিনি।

পত্রিকার প্রচারসংখ্যার বিষয়ে তিনি বলেন, 'যদি কোনো পত্রিকার প্রচারসংখ্যা ৩ লাখ বলা হয়, অথচ বাস্তবে ১ লাখ ৫০ হাজার হয়, তাহলে তারা নির্দিষ্ট হারে বিজ্ঞাপন পাবে না। বড় পত্রিকা বা রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত কিছু পত্রিকা ফোন করে বাড়তি বিজ্ঞাপন পায়—এই অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। আমরা চাই, ন্যায্যতা বজায় রেখে হার বাড়ুক, কিন্তু ভুয়া প্রচারসংখ্যা যেন না দেখানো হয়।'

'যেসব পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয় না বা কনটেন্ট সামান্য পরিবর্তন করে একাধিক পত্রিকায় ব্যবহার করা হয়, আমরা গত কয়েক মাস ধরে এগুলোর তালিকা তৈরি করেছি। আমরা প্রস্তুত আছি, যদি আপনারা (গণমাধ্যম) সমর্থন দেন, তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো,' যোগ করেন তিনি।

'শেখ মুজিবের মতো মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। বরং আমরা চাই নতুন মিডিয়া আসুক, প্রতিযোগিতা তৈরি হোক। মার্কেটে ভালোগুলো টিকে থাকুক, খারাপগুলো বাদ পড়ুক। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কনটেন্ট ও রিপোর্টিংয়ের মান। ভালো সাংবাদিকতা মানুষ পছন্দ করে—ভালো কনটেন্টের চাহিদা বাংলাদেশে সবসময়ই আছে। তাই আমরা আশাবাদী—এই সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে গণমাধ্যম আরও শক্তিশালী ও দায়বদ্ধ হবে,' বলেন তথ্য উপদেষ্টা।

মাহফুজ আলম আরও বলেন, 'টেলিভিশন মিডিয়া একটা প্রস্তাব করেছে। এটাও শর্ত সাপেক্ষ করে দেবো, আমরা ডিজিটাইজেশন করব। টেলিভিশন মিডিয়া ডিজিটাইজেশন হলে কয়েকশ কোটি টাকা রেভিনিউ বাড়বে টেলিভিশনের। এতে টিভি নেটওয়ার্কে যারা কাজ করেন, যারা মালিক বা ব্যবসায়ী তারাও উপকৃত হবেন। ডিজিটাইজেশনের কারণে প্রত্যেকটা টেলিভিশন তাদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ভালো বিজ্ঞাপন পাবে। এই সুবিধাও আমরা দেবো এই শর্ত সাপেক্ষে যে সাংবাদিকদের একটা বেসিক স্যালারি দিতে হবে, যেটার একটা লিমিট আমরা ঠিক করতে চাই। এরপর আপনারা অভিজ্ঞতা-দক্ষতার ভিত্তিতে ইনক্রিমেন্ট দেবেন। ১২-১৫ হাজার টাকা সাংবাদিকের বেতন হতে পারে না।'

তথ্য উপদেষ্টা জানান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বর্তমানে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় একটি অধ্যাদেশ এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য বিধিমালা প্রণয়নের কাজ করছে।

তিনি বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন। নভেম্বরের পর মন্ত্রিসভার বৈঠক আর হবে না, তখন সরকার নির্বাচন কমিশনের অধীনে তার ভূমিকা পালন করবে।

'আমরা নভেম্বরের মধ্যেই অধ্যাদেশগুলো প্রণয়ন করতে চাই,' বলেন তিনি।

তিনি আরও জানান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্যও বিধিমালা তৈরির কাজ করছে। এটি আগামী সপ্তাহেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের আশু করণীয় ২৩টি সুপারিশ থেকে ১৩টি প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা।

সাংবাদিক সুরক্ষা বিষয়ক প্রস্তাবনাটি শিগগির চূড়ান্ত হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা গণমাধ্যম আইনও পর্যালোচনা করছি। আগের সরকার একটা আইন করেছিল—তারা যেভাবে রাষ্ট্র ও সাংবাদিকদের সম্পর্ক দেখতে চেয়েছিল, সে অনুযায়ী ওই আইন তৈরি হয়েছিল। আমরা সেটি নতুনভাবে বিশ্লেষণ করছি।'

'এছাড়া, আমাদের দেশে বেসরকারি টেলিভিশনের জন্য কোনো আইন নেই। গত ১৫–১৬ বছরে অনেক টেলিভিশনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো অনেক সময় ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত প্রভাবের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রায় সব বড় ব্যবসায়ী গ্রুপেরই একটা করে টেলিভিশন আছে। আমরা চাই, টেলিভিশন সম্প্রচার নীতিমালা করা হোক—যেন এই খাত নিয়ন্ত্রিত, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হয়,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা ওয়েজবোর্ডের বিষয়ে বারবার চেষ্টা করেছি—নোয়াবসহ মালিকপক্ষের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে বসে সমাধান আনতে চেয়েছি। কিন্তু গত তিন–চার মাসে তেমন সাফল্য পাইনি।'

এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা জানান, সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা তারা বেঁধে দিতে চান না। 'বেশিরভাগ সাংবাদিক সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী না। তাদের সদিচ্ছা, নতুন কিছু জানার আগ্রহ, ব্যক্তিগত পড়াশোনা গুরুত্বপূর্ণ,' বলেন তিনি।

স্থায়ী গণমাধ্যম কমিশন গঠনের সুপারিশের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী গণমাধ্যম কমিশনের কাজ অনেক ব্যাপক হবে এবং এখানে সরকারের কোনো প্রতিনিধি থাকবে না। সেক্ষেত্রে কমিশন তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনেকগুলো সংস্থার কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে। ওই সংস্থাগুলোর মহাপরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলেছেন যে এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার বিষয়। তাদের মধ্যে একটা অনীহা ও অনাগ্রহ দেখেছি। এটা আসলে পলিসিগত বিষয়, হয়ত আমরা শুরু করে দিয়ে যেতে পারব, কিন্তু পরবর্তী সরকারকে কাজটা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে ভালো কিছু হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

ACC won’t need approval to sue govt officials

The Anti-Corruption Commission will no longer require government approval to file cases against judges and public servants, according to the draft ACC Ordinance 2025.

9h ago