পাকিস্তানে টিটিপির হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে গোপালগঞ্জের তরুণ নিহত

গোপালগঞ্জের এক তরুণ গত সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালেবানের (টিটিপি) হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। এই তরুণ ১৮ মাসের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ ছিলেন।

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স (সিটিটিসি) ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার রওশন সাদিয়া আফরোজ বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেন। 

নিহত রতন ঢালী (২৯) মুকসুদপুর উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন। সিটিটিআই কর্মকর্তারা জানান, ২৬ সেপ্টেম্বর খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানে তিনি এবং ফয়সাল হোসেন (২২) নামে আরেক বাংলাদেশি নিহত হন।

সাদিয়া আফরোজ বলেন, টিটিপির হয়ে পাকিস্তানে যুদ্ধে অংশ নিয়ে রতন ঢালী নিহত হয়েছেন। এটা আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়েছি।

সিটিটিআই কর্মকর্তারা জানান, রতন ও ফয়সাল গত বছরের ২৭ মার্চ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে তারা অবৈধভাবে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তানে যান, যেখানে তারা টিটিপিতে যোগ দেন। দুজনই এর আগে ঢাকার খিলগাঁওয়ের একটি মেডিকেল সেন্টারে কাজ করতেন।
 
রতন ঢালীর বাবা আনোয়ার ঢালী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক, মা সেলিনা বেগম। রতন শেষবার তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ২০২৪ সালের ১০ এপ্রিল। তখন তিনি পরিবারকে জানান, ভারতে আছেন, শিগগিরই দুবাই যাবেন।
 
সম্প্রতি হরিচর পুলিশ ফাঁড়ির কাছে রতন ঢালীর গ্রামের বাড়িতে যান এই প্রতিবেদক। সেখানে সেলিনা বেগম জানান, ২০২৪ সালের রোজার ঈদে (১০ এপ্রিল) শেষবার রতনের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, 'মা, আমি দুবাই যাচ্ছি। আমি এখন দিল্লিতে আছি'
 
মা ছেলের কাছে জানতে চান, দুবাই যাওয়ার জন্য টাকা কীভাবে ব্যবস্থা করলেন। জবাবে ছেলে জানান, যেখানে তিনি কাজ করতেন, তারাই টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এরপর আর পরিবারের সঙ্গে তার কথা হয়নি।    
 
রতনের বাবা আনোয়ার ঢালী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সেই বছর যখন রতন তার গ্রামের বাড়িতে যান, তখন তিনি তার সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে নেন এবং বলেন যে দুবাই ভ্রমণের জন্য তার এগুলো প্রয়োজন। 

'যে তাকে পাঠাচ্ছিল, আমি তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে বলেছিল, এতে তার দুবাই যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। এরপর একবার কথা হয়েছিল। পরে, পুলিশ তাকে খুঁজতে দুবার এসেছিল। আমার তিন ছেলে এবং এক মেয়ে আছে। রতন স্কুল ছাড়ার পর বদলে যায়। পঞ্চম শ্রেণীর পর সে পড়াশোনা ছেড়ে দেয় এবং মোবাইল সার্ভিসিং শিখতে শুরু করে।'

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তানি বাহিনী ৫৪ জন টিটিপি যোদ্ধাকে হত্যার পর তাদের তদন্ত শুরু হয়। নিহতদের মধ্যে সাভারের আহমেদ জুবায়ের ওরফে যুবরাজ নামে একজন বাংলাদেশি ছিলেন। এরপর এসবি তদন্ত শুরু করে এবং জানতে পারে— রতন ও ফয়সাল নামে আরও দুই বাংলাদেশি টিটিপিতে যোগ দিয়েছিলেন।

Comments