নরসিংদীর ভূমিকম্প মনে করিয়ে দিয়েছে, দেশের মধ্যাঞ্চল স্থির নয়: ভূতাত্ত্বিক সমিতি
নরসিংদীতে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্প মনে করিয়ে দিয়েছে, দেশের মধ্যাঞ্চল মোটেই স্থির নয়। শুক্রবার ভূমিকম্প ভূগর্ভকে চাপমুক্ত করেছে এমনটি ভাবার অবকাশ নেই, বরং ধীরে ধীরে চাপ বাড়ছে এবং যেকোনো সময় এ ধরনের আরও ভূমিকম্প ঘটতে পারে।
শুক্রবার বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম এবং সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ার জাহিদ সই করা বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ভেতর-বাইরের মধুপূর ফল্ট, ডাউকি ফল্ট, প্লেট বাউন্ডারি, আরাকান সাবডাকশান জোন আরও বড় মাত্রার ভূ-কম্পন তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিকভাবে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে অবস্থান করায় আগামী দশকগুলোতেও বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি থেকেই যাবে। শুক্রবারের ঘটনাটি বিজ্ঞানীদের জন্য নতুন বার্তা এনে দিয়েছে আর নীতিনির্ধারকদের সামনে ঝুঁকি কমানোর জরুরি দায়িত্ব তুলে ধরেছে। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক সমিতি মনে করে, বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও দেশের বিভিন্ন খাতে টেকসই উন্নয়নের জন্য ভূতাত্ত্বিক জ্ঞান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভূতত্ত্ববিদদের সক্রিয় অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণ জরুরি।
এতে বলা হয়, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদীর মাধবদী এলাকায় ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটারের গভীরে একটি ভূকম্পন ঘটেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর ও অন্যান্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল পাঁচ দশমিক পাঁচ থেকে পাঁচ দশমিক সাত, যা ছিল মাঝারি মাত্রার। ভূমিকম্পটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ভূকম্পনের গভীরতা তুলনামূলক স্বল্প হওয়ায় ভূমিতে সঞ্চারিত কম্পন শক্তিশালীভাবে অনুভূত হয়েছে।
'ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই অঞ্চলটি এমন একটি এলাকায় অবস্থিত, যেটি ইন্দো-বার্মা টেকটোনিক প্লেটের অংশভুক্ত। এটি শীতলক্ষ্যা নদীর ফল্ট লাইন বরাবর সংঘটিত হয়েছে। এ থেকে অনুমান করা যায়, দেশে আগামীতেও এ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে লুকানো ফল্টগুলোর দ্রুত ম্যাপিং করে জাতীয় ভূমিকম্প ঝুঁকি মানচিত্রে গুরুত্ব সহকারে যুক্ত করা প্রয়োজন। ঢাকা ও আশপাশের এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এ ধরনের ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ভূতত্ত্ববিদদের সক্রিয় অংশগ্রহণে বিস্তারিত মাইক্রোজোনেশন জরুরি ভিত্তিতে করা প্রয়োজন।'
এতে আরও বলা হয়, বিশেষজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদদের মতে, বাংলাদেশের জিওগ্রাফিক-জিওলজিক্যাল-টেকনিক অবস্থান খুবই জটিল। তবে বাংলাদেশ স্পষ্টভাবে সাবডাকশন সম্পর্কিত প্লেট বাউন্ডারিতে অবস্থিত। ইন্ডিয়ান প্লেটটি বার্মিজ প্লেটের নিচে যাওয়া শুরু করছে কয়েক লাখ বছর আগে, এর ফলেই চট্টগ্রাম, সিলেটের পাহাড়গুলো তৈরি হয়েছে। প্লেট দুটোর চাপ এখনও চলমান রয়েছে। তবে এর গতি-প্রকৃতি বোঝার জন্য আরও সমীক্ষা ও গবেষণা প্রয়োজন।


Comments