যে অপরাধী মুক্তি পেয়ে খুন করতে পারে সে জামিন পেতে পারে না: আসিফ নজরুল
ভারতে পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা একের পর এক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকারীদের হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এবং তার দলের অনুসারীরা যদি জামিন পায়, এটা জামিনের কোনো নিয়মনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না বলে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, 'আজকে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের শেষ কর্মদিবস ছিল। আমি তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছিলাম। জাতির একটা অত্যন্ত সন্ধিক্ষণে তিনি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি আমাদের যে জুলাই গণঅভ্যুত্থান আছে, সেটার যে প্রত্যাশা, সেটা পূরণ করার জন্য বিচার বিভাগীয় যে সংস্কারগুলো ছিল সেই সংস্কারগুলোর ক্ষেত্রে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেছেন।'
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, 'আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যেই আইনগুলোই করেছি সবকিছুর পেছনে তার সমর্থন ছিল। আমাদের বিভিন্ন সময় যে বিভিন্ন কনসার্ন ছিল, তা ব্যক্ত করেছি। একটা বিষয় আপনাদের বলে নেই—এখন প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। যেমন ধরেন—হাইকোর্টের কোনো কোনো বেঞ্চ অস্বাভাবিক জামিন দিয়ে দিচ্ছে। এটা নিয়ে আমি আমার কনসার্নের কথা প্রধান বিচারপতিকে এর আগে দেখা করে জানিয়েছিলাম। আজকেও জানিয়েছি। আমি আপনাদের প্রকাশ্যে বলে গেলাম, এর আগে যতবার দেখা হয়েছে প্রধান বিচারপতিকে বলেছি, তিনি কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।'
তিনি বলেন, যে বেঞ্চগুলো থেকে চার ঘণ্টায় ৮০০ জামিন দেওয়া হয়েছিল, তিনি (প্রধান বিচারপতি) তাদেরকে ডেকেও পাঠিয়েছিলেন। তিনি তার মতো ব্যবস্থা নিয়েছেন। তারপর এই জামিনের প্রকোপ কিছুটা কমেছে, কিন্তু তা এখন অব্যাহত আছে। যে অস্বাভাবিক জামিন—যেখানে একজন ভয়ংকর ব্যক্তি যিনি জামিন পেয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যারা নায়ক আছে তাদের ওপর হামলা করতে পারেন, এই ধরনের জামিন যখন হয় তখন আমরা প্রচন্ড শঙ্কিত, আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন বোধ করি। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের হাইকোর্টের ওপর কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ নাই। নিয়ন্ত্রণ থাকার কথাও না। হাইকোর্টের অভিভাবক হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি। তার কাছে আগেও এ ব্যাপার উৎকণ্ঠা জানিয়েছিলাম। আজকে আবারও জানিয়েছি এবং আমি আশা করি ভবিষ্যতে নতুন যে প্রধান বিচারপতি আসবেন তার সঙ্গে আমার প্রথম যখন মিটিং হবে সেখানে আমি তাকে বলব যে, আজকে যে ভারতে পলাতক ফ্যাসিস্ট নেত্রী শেখ হাসিনা একের পর এক আমাদের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকারীদের হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন এবং তার দলের অনুসারীরা যদি জামিন পায়, এটা জামিনের কোনো নিয়মনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। কারণ আমাকে পটেনশিয়ালি খুন করতে পারে এমন একজনকে যদি কোনো বিচারক জামিন দেয়, তাহলে এই খুনের দায়-দায়িত্ব তার ওপর পড়ে কি না সেটা তাদেরকে বিবেচনা করা উচিত।
আইন উপদেষ্টা বলেন, 'পরিস্থিতি এমন একটা দিকে গিয়েছে যে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করার জন্য আমাদের যেকোনো এক্সটেন্টে যাকে যা বলার এটা আবার বলতে হবে। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, আমাদের যে নতুন প্রধান বিচারপতি হবেন তার সঙ্গে প্রথম মিটিংয়ে আমি এই ব্যাপারে বলব যেসব ক্ষেত্রে আইনগতভাবে জামিন প্রাপ্য অধিকার সেটা জামিন দিবেন। বিচারকরা অবশ্যই দিবেন। কিন্তু যেই অপরাধী বা যেই ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পেয়ে আপনাকে, আমাকে খুন করতে পারে বলে আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, সে জামিন পেতে পারে না। আমরা এই ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।'
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমি মনে করি ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কোয়ালিফাইড, সবচেয়ে সৎ একজন প্রধান বিচারপতিকে আমরা পেয়েছিলাম। এটাও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটা অর্জন। আগামীতেও আমরা এরকম দক্ষ অভিভাবকের নেতৃত্বে বিচার বিভাগে যেসব অনিয়ম আছে বা যেসব ব্যাপারে প্রশ্ন আছে সেগুলো দূর করার ব্যাপারে কাজ করে যাব।


Comments