ক্যাম্পাসে ছাত্রপ্রতিনিধিদের এখতিয়ারবহির্ভূত তৎপরতা বন্ধের দাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্বাচিত ছাত্রপ্রতিনিধিদের এখতিয়ারবহির্ভূত ও আগ্রাসী তৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সংগঠনটি একইসঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ ও মবসন্ত্রাসের ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আজ রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, তরুণ রাজনীতিবিদ ওসমান হাদিকে ১২ ডিসেম্বর গুলি করা এবং ১৮ ডিসেম্বর তার মৃত্যুর পর সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী ধারাবাহিকভাবে সহিংস ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থতার মধ্যেই দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ও উদীচীতে হামলা হয়েছে। দ্য ডেইলি স্টারে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আটকে পড়া সাংবাদিকদের উদ্ধার করতে গেলে নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর হেনস্থার শিকার হন।
এছাড়া ময়মনসিংহের ভালুকায় কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দিপু চন্দ্র দাসকে হত্যা করে মরদেহে আগুন দেওয়া, লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে তার দুই সন্তান আয়েশা ও সালমা আক্তার শিল্পীকে হত্যা এবং রাজশাহীর বাগমারায় চুরির মিথ্যা অভিযোগে ভ্যানচালক ওমর ফারুককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাগুলোর তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
বিবৃতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারের বিরুদ্ধে 'মবপ্রবণতার' সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তোলা হয়।
এতে বলা হয়, ডিনদের পদত্যাগে চাপ সৃষ্টি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হয়রানি এবং হুমকিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।
শিক্ষক নেটওয়ার্ক অভিযোগ করে, রাকসু জিএস ঘোষণা দিয়েছেন—লীগপন্থী শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে ঢুকলে 'কলার ধরে টেনে এনে প্রশাসন ভবনের সামনে বেঁধে রাখা হবে।'
অন্যদিকে রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ রাজশাহীর ভারতীয় হাইকমিশন উচ্ছেদের উসকানি দেন এবং কোনো 'আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শিক্ষক' ক্লাসে আসতে পারবে না বলে হুমকি দেন।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উদীচী ও ছায়ানটকে 'তছনছ করে দেয়ার' আহ্বান জানালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জনপরিসরে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে।
শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ দেখা যায়নি, যদিও অনেক কর্মকাণ্ড ফৌজদারি অপরাধের আওতাভুক্ত।
সরকারের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে মবসন্ত্রাস, হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকাকে 'চরম ব্যর্থতা' হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।
শিক্ষক নেটওয়ার্কের দাবি, ওসমান হাদির হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রপ্রতিনিধি ও একটি বিশেষ দলের সদস্যদের সন্ত্রাসী ও এখতিয়ারবহির্ভূত তৎপরতা বন্ধে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে স্বায়ত্তশাসিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
এছাড়া জামায়াতে ইসলামীকে তাদের অঙ্গসংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতাদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানানো হয়েছে। রাকসু, জাকসু ও ডাকসুর যেসব নেতা উসকানি দিয়েছেন বা সরাসরি হামলায় যুক্ত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়।

Comments