দুই দিন ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ, চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা
গত দুই দিনে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ কর্মসূচির কারণে ট্রেনযাত্রীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
গতকাল শনিবার দীর্ঘ সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর আজ রোববার আবারও অবরোধ শুরু হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা দ্বিতীয় দিনের মতো আজ দুপুর ১২টার দিকে রেললাইন অবরোধ করেন।
পরে গফরগাঁও এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ট্রেন চলাচল আংশিকভাবে শুরু হয়।
এর আগে, শনিবার টানা নয় ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এরপর গতকাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও দুপুরে পুনরায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা রেললাইন অবরোধ করেন এবং সেখানে আগুন ধরিয়ে দেন।
ময়মনসিংহ সরকারি রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি)-এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আখতার হোসেন জানান, গফরগাঁও এলাকায় রেলপথের বিভিন্ন স্থানে অবরোধের কারণে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, অগ্নিবীণা, হাওর এক্সপ্রেস, জামালপুর এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, বলাকা কমিউটার, মহুয়া কমিউটার ও জামালপুর কমিউটারসহ একাধিক ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে।
তিনি বলেন, এখনো ট্রেন চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। সকালে ঢাকাগামী বলাকা ও জামালপুর কমিউটার ট্রেন এবং যমুনা এক্সপ্রেস চলেছে। সন্ধ্যায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় গফরগাঁও স্টেশন দিয়ে ময়মনসিংহগামী তিস্তা ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস চলাচল করেছে। তবে পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক নয়।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, অবরোধের কারণে ট্রেনগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তিনি জানান, প্রতিদিন এই রুটে প্রায় ২৪ জোড়া ট্রেন চলাচল করে, যাতে প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। এ ধরনের অবরোধ যাত্রীদের অকল্পনীয় দুর্ভোগে ফেলছে।
আজ সন্ধ্যায় সরকারি আনন্দমোহন কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র আরেফিন তালুকদার জানান, তিনি মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের জন্য ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছেন। তার ভাষ্য, 'ট্রেনটি জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে। কখন বাড়ি পৌঁছাতে পারব—তা অনিশ্চিত।'
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা থেকে ব্রহ্মপুত্র ট্রেনে ঢাকাগামী যাত্রী আমির হোসেন বলেন, তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে ময়মনসিংহ স্টেশনে পৌঁছানোর পর থেকেই অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, 'আমি উত্তরা এলাকায় একটি দোকান চালাই। শীতের পিঠা খেতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।'
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আশরাফুন নাহার টনি জানান, তিনি তার বৃদ্ধা মা ও চার বছরের সন্তানকে নিয়ে জামালপুরের মেলান্দহে ফিরছিলেন। 'ব্রহ্মপুত্র ট্রেনটি গাজীপুরের শ্রীপুরে থেমে যায়। পরে আজ স্কুলে উপস্থিত থাকার জন্য আমাকে একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করতে হয় এবং ভোর ৪টার দিকে বাড়ি পৌঁছাই,' বলেন তিনি।
হাওর এক্সপ্রেসের এক কর্মচারী জানান, ট্রেনটি আজ সকাল ৬টার দিকে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে পৌঁছায়, যেখানে সাধারণত রাত ২টার দিকে পৌঁছানোর কথা। তিনি আরও বলেন, মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ট্রেনটি দুপুর ১২টার দিকে ময়মনসিংহে এসে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিল, যদিও ঢাকায় পৌঁছানোর নির্ধারিত সময় ছিল দুপুর ২টা।
মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকা এক ছাত্রী বলেন, তিনি তার মাকে সঙ্গে নিয়ে কনকনে শীতের মধ্যে পাঁচ ঘণ্টা ধরে স্টেশনে অপেক্ষা করছেন।
এদিকে জামালপুরের আবদুল ওয়াহেদ বলেন, কখন ট্রেনগুলো গন্তব্যে ছাড়বে তা নিয়ে সবাই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। তিনি জানান, দুই সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকাগামী ব্রহ্মপুত্র ট্রেনে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছেন।


Comments