গাজীপুরের মানুষকে ‘থ্রেট’ দিয়েন না: আ. লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে জাহাঙ্গীর

মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরে নিজ বাসভবনে মা জায়েদা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে গাজীপুরের বরখাস্তকৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, 'গাজীপুরের মানুষকে আপনারা থ্রেট দিয়েন না। আপনারা নেতা, আমরা কর্মী। সংস্থা দিয়ে, পেশী শক্তি দিয়ে আপনারা কর্মীর বাসায় যাচ্ছেন, থ্রেট দিচ্ছেন। এটাকে ভোটের পরিবেশ বলে না।'

গতকাল আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার হওয়ার পর আজ মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুর মহানগরের ছয়দানা এলাকায় নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তার সঙ্গে তার মা জায়েদা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।

আসন্ন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মায়ের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর বলেন, 'আমার মা জায়েদা খাতুন একজন সংগ্রামী নারী। তিনি নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। জন্মের পর থেকেই আমার মা আমাকে ছাত্রলীগ করার জন্য, আওয়ামী লীগ করার জন্য যে শিক্ষা দিয়েছেন, সে শিক্ষা নিয়ে আমি গাজীপুরে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছি।'

তিনি বলেন, 'ছাত্রজীবন থেকে আমি আমার সংগঠনের আদর্শ নিয়ে নিয়ম-নীতির বাইরে কোনোদিন চলি নাই। আমি ৬ বছর গাজীপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। ২০১৮ সালে নৌকা নিয়ে আমি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করেছি। আওয়ামী লীগসহ নগরবাসী সবাই আমাকে ভোট দিয়েছে, সহযোগিতা করেছে।'

'একজন নির্বাচিত জন প্রতিনিধির কাজ হচ্ছে সে কোনো দল থেকে মনোনীত হয়। নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পর তাকে মানুষের কাজ করতে হয়,' যোগ করেন তিনি।

জাহাঙ্গীর বলেন, 'দলমত নির্বিশেষে এ শহরের সবার কাজ করে দিয়েছি। দীর্ঘ ৩ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করার পর আমার গাজীপুরের কোনো মানুষ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি। কিন্তু একজন মানুষ আমার বিরুদ্ধে বলেছে। সব নেতৃবৃন্দ আমাকে বলেছে তুমি কোনো অন্যায় করো নাই। তোমার জিনিসটা সমাধান হয়ে যাবে আমরা বলব। কিন্তু দুঃখের বিষয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেউ সঠিক খবরটি পৌঁছায়নি এবং উপস্থাপন করেনি।'

'মেয়র থাকা অবস্থায় আমি যেসব কাজ করেছি, সব কাজ সরকারি নিয়ম মেনেই করেছি। তারপরও আমার মেয়র পদ বাতিল বা স্থগিত হয়ে গেছে,' যোগ করেন তিনি।

দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত তার ওপর 'অবিচার' উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর বলেন, 'গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে এবং মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করার বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদকের ২ মিনিট আমার কথা শোনার সময় হয়নি। তাদের কাছে আমাকে পৌঁছানোর কোনো পথ তৈরি করে রাখা হয়নি। শুধু আমার বিরুদ্ধে নালিশ দিয়েছে।'

'আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় প্রত্যেক নেতার দরজায় গিয়েছি। কিন্তু কেউ আমাকে সুযোগ দেয়নি। নেতৃত্ব হচ্ছে যদি কর্মী বিপদে পড়ে তাহলে নেতৃত্বে যারা আছেন তারা আলোচনা করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা,' বলেন তিনি।

'গাজীপুরে লাখো মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে' জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সবাই একসাথে হয়ে গাজীপুরে ভোট করতে আসছেন। আপনারা যুদ্ধ করতে যেখানে আণবিক বোমা ব্যবহার করতে আসছেন, সেখানে আণবিক বোমার কোনো দরকার ছিল না। আমি ও আমার মায়ের সঙ্গে যারা কাজ করছেন, প্রশাসনের লোকদের দিয়ে তাদের হুমকি দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যারা টেবিল ঘড়ি মার্কায় কাজ করছেন, প্রশাসনের লোক তাদের বাসায় বাসায় যাচ্ছে।'

কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সত্যটা জানান। তিনি সত্যটা জানুক। তার নেতাকর্মীদের ওপর এখানে হয়রানি করা হচ্ছে, অবিচার করা হচ্ছে। সেজন্য আমার মা আমাকে বলেছেন তোমার ওপর যে অবিচার করা হয়েছে, গাজীপুরের ১২ লাখ ভোটার এবং ৪০ লাখ মানুষের ওপর অবিচার করা হয়েছে।'

সিটি নির্বাচনে আজমত উল্লাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর বলেন, 'তিনি আমার ক্ষতি করার পেছনে জড়িত ছিল। সত্য জানার জন্য আজ সব পাওয়ার চলে গেছে, রাষ্ট্রের সব পাওয়ার চলে গেছে। দলের সব চলে গছে। তারপরও আমারা মা-সন্তান দাঁড়িয়েছে। তারপরও কেন কর্মীর ওপর অত্যাচার করা হয়?'

নিজেকে আওয়ামী লীগের সমর্থক দাবি করে তিনি আরও বলেন, 'একজন সমর্থককে বহিষ্কার করতে আপনাদের কেন্দ্রীয় কমিটি কেন লাগবে? আমি আবেদন করব আমাকে দলের সমর্থক হিসেবে থাকার জন্য জায়গা করে দেন। ক্ষমতার জন্য না, পদের জন্য না। আমার বিরুদ্ধে যে অবিচার করা হয়েছে, সেই সত্যটা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমি আমার মায়ের সঙ্গে আছি।'

নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে তিনি বলেন, 'ইভিএম ভালো না খারাপ, সেটা আগামী ২৫ মে নির্বাচনের দিন দেখতে পারবেন। তখন আপনারাই বলবেন ভালো না খারাপ।'

গতকাল আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জাহাঙ্গীরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।

Comments

The Daily Star  | English
honor smartphone inside

How to build a smartphone

Smartphones feel inevitable in the hand, yet each one begins as a set of drawings, components and hypotheses. The journey from concept to finished device is a carefully sequenced collaboration between design labs, supplier networks and high-throughput assembly lines. In leading electronics hubs across Asia, that journey can take as little as days once a design is frozen and parts are on site.

3h ago