‘জনগণের দাবির মিছিল না ঠেকিয়ে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান চালান’

বাম জোট
ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও ধাপে ধাপে মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার প্রতিবাদে এবং বিদ্যুৎ খাতের বিপর্যয় ও সংকটের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত ও বিচারের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভের আয়োজন করে।

আজ দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পর জ্বালানি মন্ত্রণালয় অভিমুখে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে পল্টন মোড়ে পুলিশি ব্যারিকেডের মুখে পড়ে। এরপর বাম জোটের নেতাকর্মীরা পল্টন মোড়ে বসে পড়ে সমাবেশ করেন।

সমাবেশে বাম নেতারা শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশি বাধার তীব্র নিন্দা জানান।

নেতারা বলেন, 'আমরা জনগণের দাবি নিয়ে বিদ্যুতের দাম কমানোর যৌক্তিক দাবিতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে যেতে চেয়েছিলাম। আমাদের মিছিলে বাধা দিয়ে প্রকারান্তরে জনগণের দাবির প্রতি অবহেলা করা হলো।'

তারা আরও বলেন, 'জনগণের দাবির মিছিল না ঠেকিয়ে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করুন। বিদ্যুৎ লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। যাদের নীতির কারণে আজ বিদ্যুৎ খাত জনগণের এবং জাতীয় অর্থনীতির গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করুন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।'

'বিদ্যুতের দাম বাড়লে শুধু গ্যাসের বিল বাড়ে না, উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। এমনিতেই সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে, এর ওপর মূল্যবৃদ্ধি। সাধারণ মানুষের ওপর এটা যেন মরার উপরে খারার ঘা', যোগ করেন তারা।

বাম জোটের নেতারা বলেন, 'ইতোমধ্যে বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির বিল ঘণ্টা প্রতি ৩০ টাকা বেড়ে গেছে। আরও বাড়বে বলে জানানো হয়েছে। ক্ষুদ্র শিল্প সংকটের মুখে পড়েছে। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা সংকটের কথা তুলে ধরছেন, কিন্তু সরকার এদিকে কর্ণপাত করছে না। ফলে এই মূল্যবৃদ্ধি সর্বত্রই এক অসহনীয় অবস্থা নিয়ে আসবে।'

তারা আরও বলেন, 'সরকার ২৯ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা দিয়ে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে দাম বাড়িয়েছে। এটা কোনো আইনেই যুক্তিযুক্ত করা যায় না। বিদ্যুৎ জ্বালানির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে গণশুনানি করার কথা। অতীতে অনুষ্ঠিত গণশুনিতে আমরা এবং দেশের বিশেষজ্ঞরা প্রমাণ করেছিলাম যে সরকার ব্যবসায়ী ও লুটেরাদের সুযোগ দেওয়ার জন্য আমদানি নির্ভর জ্বালানির ওপর বিদ্যুৎ খাত দাঁড় করাচ্ছে, যা দেশের জন্য এক সময় বিপর্যয় ডেকে আনবে। আমরা বিকল্প তুলে ধরেছিলাম।'

'আমরা বলেছিলাম, দেশের স্থল ও সমুদ্র ভাগে গ্যাস উত্তোলন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপরে নির্ভর করে পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে, জ্বালানি খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। এসব কথা না শুনে জ্বালানি ক্ষেত্রে দায় মুক্তি আইন জারি করে লুটপাটের অবাধ ক্ষেত্র তৈরি করা হলো। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে অনেক ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা ক্যাপাসিটি পেমেন্টের নামে হাতিয়ে নিল। সরকারের নীতির কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।তাই এই দায় সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে', নেতারা বলেন।

বামজোট বলে, 'জ্বালানি মন্ত্রণালয় জনস্বার্থে ভূমিকা নেয় এমন কোনো প্রমাণ নেই। বরং তারা বিদেশি কোম্পানি ও দেশি-বিদেশি লুটেরা ব্যবসায়ীদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বেতন-ভাতা জনগণের টাকায় হলেও তারা আজ লুটপাটকারীদের সহায়কের ভূমিকা পালন করছে।'

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী। সমাবেশ পরিচালনা করেন সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus, Charter, and Our Future

Yunus, Charter, and Our Future

Can the vision for 'New Bangladesh' ignore the poor, farmers, workers, youth, women, or employment and climate crises?

9h ago