হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ কড়ায়-গণ্ডায় আদায় করে নেবে: মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'রাষ্ট্রের টাকায় কেনা হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ কড়ায়-গণ্ডায় আদায় করে নেবে।'

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সহিংসতার পর সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার, জুলুম-নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আজ শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'সরকারি চাকরিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে হামলা চালিয়ে ইতিহাসে হতাহতের যে বর্বরোচিত নজির স্থাপন করেছে তা দেশ-বিদেশের সব স্বৈরাচারের নির্মম নিষ্ঠুরতাকেও হার মানিয়েছে।'

তিনি বলেন, 'অবৈধ সরকার নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্যর্থতা আড়াল করতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন সিকদার, নাটোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজকে গ্রেপ্তার এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির গ্রেপ্তারকৃত সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক মোশাররফ হোসেন খোকনকে ৩ দিন পর আদালতে তোলা হয়েছে।'

'অব্যাহত গতিতে দেশব্যাপী বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি হচ্ছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বাসাসহ অনেক সিনিয়র নেতার বাসায় তল্লাশি চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী,' বিবৃতিতে বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, 'গ্রেপ্তারকৃতদের গুম করে রেখে নির্যাতন চালিয়ে তিন-চার-পাঁচ দিন পর আদালতে হাজির করা হচ্ছে যা আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। দেশের নাগরিকদের গুম করে রাখার ভয়াবহ সংস্কৃতি চালু রেখে মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করা হচ্ছে। সরকারকে এ ধরনের লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড পরিহারের আহ্বান জানাচ্ছি।'

'রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'গত কিছুদিন ধরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যখন যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলনরত তখন সেই মুহূর্তে সরকারপ্রধানসহ সরকারি দলের নেতা-মন্ত্রীরা তাদের তাচ্ছিল্য করে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্দেশ দেয় তাদের নির্মূল করার। সরকারি দলের সন্ত্রাসী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে জনগণের টাকার কেনা গুলি, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে নিক্ষেপের মাধ্যমে শত শত নিরীহ শিক্ষার্থীকে গণহারে হত্যা এবং হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে আহত করেছে যা দেশবাসীসহ বিশ্ববাসী দেখেছে।'

'এই নির্মম অত্যাচারে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ হতবাক ও ক্ষুব্ধ হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে এবং সারা দেশে কর্মসূচিও পালন করেছে,' উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। 

'ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে দমনের জন্য সেনাবাহিনী ব্যবহার কখনই গ্রহণযোগ্য নয়' মন্তব্য করে তিনি অবিলম্বে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'বরাবরই আওয়ামী লীগ লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছে এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য গত কয়েকদিন যে পরিমাণ নিরীহ ছাত্র-মানুষকে গুলি চালিয়ে পাখির মতো হত্যা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে তা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কথাই মনে করিয়ে দেয়।'

'গত কয়েকদিনে কত নিরীহ মানুষকে হত্যা ও পঙ্গু করা হয়েছে, জনগণ তার সঠিক পরিসংখ্যান জানতে চায়। এছাড়া জনগণের টাকায় কেনা কী পরিমাণ গোলাবারুদ, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে তার হিসাবও জনগণ জানতে চায়। রাষ্ট্রের টাকায় কেনা হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন কড়ায়-গণ্ডায় আদায় করে নেবে,' যোগ করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, 'যে সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্মমভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা দিতে পারে না সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। তাই এই অবৈধ সরকারকে বলব, অবিলম্বে পদত্যাগ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করার লক্ষ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিন।'

'গণহত্যা, নির্যাতন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে' সব দেশপ্রেমিক মানুষ, রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এছাড়া বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার বিএনপির সব নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে সবার নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

Comments

The Daily Star  | English

‘Shoot directly’: Hasina’s deadly order

Months-long investigation by The Daily Star indicates state forces increased deployment of lethal weapons after the ousted PM authorised their use; verified call recording also suggests she gave order to open fire on July uprising protesters

17m ago