নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি হেফাজতে ইসলামের, ২৩ মে সারাদেশে বিক্ষোভ

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ। ছবি: স্টার

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদনকে কোরআনবিরোধী উল্লেখ করে এই কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

এছাড়া তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় সম্মেলন ও ২৩ মে বাদ জুমা দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে ইসলামী সংগঠনটি।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসমাবেশ থেকে নতুন দুই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এর আগে দলের পক্ষ থেকে ১২ দফা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মাওলানা মাহফুজুল হক।

এতে আলেম-ওলামার পরামর্শক্রমে ধর্মপ্রাণ নারী সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়।

ইসলামী দলটির দাবি, নারীর সামাজিক উন্নয়নে পশ্চিমা মূল্যবোধ নয়, বরং আমাদের নিজস্ব সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আলোকেই বাস্তবমুখী সংস্কারের দিকে যেতে হবে।

১২ দফা ঘোষণাপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, সংবিধানে 'আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' পুনঃস্থাপন করতে হবে এবং ধর্মপ্রাণ গণমানুষের ঈমান-আমল রক্ষার্থে 'বহুত্ববাদ' নামক আত্মঘাতী ধারণা থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে।

হেফাজতে ইসলাম জানায়, 'লিঙ্গ পরিচয়', 'লিঙ্গ বৈচিত্র্য', 'লিঙ্গ সমতা', 'লিঙ্গ বৈষম্য', 'তৃতীয় লিঙ্গ' (বা থার্ড জেন্ডার), 'অন্যান্য লিঙ্গ' ইত্যাদি শব্দের মারপ্যাঁচে, 'কাউকে বাদ দিয়ে নয়' এমন ধোঁয়াশাপূর্ণ শ্লোগানের অন্তরালে এবং অসংজ্ঞায়িত 'অন্তর্ভুক্তিমূলক' (বা 'ইনক্লুসিভ') ইত্যাদি শব্দের আড়ালে এলজিবিটি ও ট্রান্সজেন্ডারবাদের স্বীকৃতি ও অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সমাজবিধ্বংসী ও ধর্মবিরুদ্ধ সমকামী-বান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠার পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে।'

অন্যান্য দাবির মধ্যে, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর এবং ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার বিচারে ট্রাইব্যুনালের সক্ষমতা বাড়ানো এবং নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে বলে দাবি তাদের।

আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বিচার নিশ্চিত করা ও বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সব ধরনের কার্যক্রম ও তৎপরতা নিষিদ্ধের দাবি জানায় হেফাজতে ইসলাম।

এছাড়া আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর নামে কটূক্তি ও বিষোদ্গার বন্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আইন এবং গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননার শাস্তি সংক্রান্ত আইনি ধারাগুলো বাতিলের সুপারিশ বাদ দিতে হবে বলেও দাবি জানানো হয়।

চট্টগ্রামে শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় চিন্ময় দাসের জামিন প্রত্যাহার করে তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি জানিয়েছে।

এছাড়া ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার শাসনামলে আলেম-ওলামা, মাদরাসা শিক্ষার্থী ও ইসলামমনা তরুণদের বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যা ও বানোয়াট মামলাগুলো অতিসত্বর প্রত্যাহার বা নিষ্পত্তির দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ইসলামপন্থী ও আলেম-ওলামার ওপর যারা গত ১৫ বছর নির্যাতন ও গুম-খুন চালিয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।

হেফাজতে ইসলাম তাদের ঘোষণাপত্রে দাবি করে, গাজার মুসলমানদের ওপর ইসরায়েলের গণহত্যা ও ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারকে কূটনৈতিকভাবে আরও উচ্চকণ্ঠ হতে হবে এবং দেশের সর্বস্তরে জনতাকে ইসরাইলি ও ভারতীয় পণ্য বয়কট করতে হবে।

এছাড়া রাখাইনকে 'মানবিক করিডোর' নিয়ে সরকারের সম্মত হওয়া সম্পূর্ণরূপে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করে হেফাজতে ইসলাম। ভৌগোলিক নিরাপত্তার স্বার্থে এ অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে ফিরে আসতে হবে বলে জানায় সংগঠনটি।

তাদের দাবি, 'চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে ভিনদেশি মিশনারীদের অপতৎপরতা ও দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সেখানে নিরাপত্তা সংকট কমাতে আলেমসমাজের দাওয়াতি কার্যক্রমকে আরও নিরাপদ ও সুযোগ করে দিতে হবে। সেখানে সামরিক নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো বৃদ্ধি করা ছাড়াও পাহাড়ি বাঙালি ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমঝোতা ও স্থিতি নির্মাণে রাষ্ট্রীয় তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে।'

হেফাজতে ইসলামের দাবির মধ্যে আছে কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে 'অমুসলিম' ঘোষণা করতে হবে।   

Comments

The Daily Star  | English

ACC to get power to probe corruption by Bangladeshis anywhere, foreigners in Bangladesh

The Anti-Corruption Commission (ACC) is set to receive sweeping new powers under a proposed ordinance that will allow it to investigate corruption by Bangladeshi citizens, both at home and abroad, as well as by foreign nationals residing in the country. .The draft Anti-Corruption Commissio

48m ago