ইউনূস-তারেক বৈঠক নিয়ে রাজনীতিতে আশাবাদ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে আগামী নির্বাচনের সময় নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থার অবসান ঘটবে বলে অনেকে আশা করছেন।

আজ শুক্রবার লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে সেখানকার সময় সকাল নয়টায় ও বাংলাদেশের সময় বেলা দুইটায় এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার জানান, এটি সম্ভবত একটি ওয়ান টু ওয়ান বৈঠক হবে। তবে বৈঠকে আরও কেউ উপস্থিত থাকবেন কিনা, সে ব্যাপারে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমান সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

সাংবাদিকদের শফিকুল আলম আরও বলেন, 'নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হতে চলেছে...। আমরা আশা করছি, সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, কারণ তাদের একজন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান এবং অন্যজন বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান।'

অধ্যাপক ইউনূস এখন চার দিনের সফরে লন্ডনে অবস্থান করছেন, যেখানে তারেক প্রায় দুই দশক ধরে বসবাস করছেন।

গত ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাজ্য সফরের ঘোষণা আসার পর থেকেই এই বৈঠক নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়, যদিও এটি প্রধান উপদেষ্টার ভ্রমণসূচিতে ছিল না।

মঙ্গলবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তারেককে তার হোটেল দ্য ডরচেস্টারে একটি বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি নিশ্চিত করেন যে বৈঠকটি হচ্ছে।

দলীয় সূত্রের খবর, প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি বলেছেন যে নির্বাচন এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে। তারেক তাকে বলতে পারেন যে নির্বাচন আরও আগে হওয়া উচিত, কারণ রমজান মাস মার্চের মাঝামাঝি শেষ হবে এবং সেই সপ্তাহগুলো নির্বাচনের প্রচারণার জন্য আদর্শ হবে না।

শফিকুল আলম বলেন, বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জুলাই সনদ এবং সংস্কার নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

বিএনপি মনে করে, এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত এবং সংস্কারগুলো অনেক আগেই বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'রাজনীতি আপসের শিল্প। আপস করে উভয় পক্ষই জাতির জন্য সঠিক সময়ে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারে।'

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, এই বৈঠকের পর ভবিষ্যতে কীভাবে দেশ পরিচালিত হবে সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

'এই বৈঠকের মাধ্যমে আমরা আশা করি দ্রুত একটি গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দিকে এগিয়ে যাব। যত দ্রুত আমরা গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দিকে এগিয়ে যাব, তত দ্রুত স্বস্তির অনুভূতি ফিরে আসবে এবং অন্যান্য রাজনৈতিক সমস্যাগুলোও প্রশমিত হবে।'

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন মনে করেন, ইউনূস-তারেক বৈঠক বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ খুলে দেবে।

বিএনপির অন্যতম শীর্ষ এই নেতা বলেন, 'আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সেই বিষয়গুলো উত্থাপন করার জন্য অনুরোধ করেছি, যা বিএনপি একটি দল হিসেবে এতদিন ধরে বলে আসছে।'

বিষয়টি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, 'এই বৈঠক থেকে গণতন্ত্র ও দেশের জন্য ভালো কিছু হতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব।'

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারীর বক্তব্য, 'আমরা আশা করি সরকার জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং সংস্কারকে পাশ কাটিয়ে যাবে না। যদি সরকার কাউকে নির্বাচনের সময় সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে এনসিপি সরকারকে সেই প্রতিশ্রুতি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানাবে।'

এক বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান আশা প্রকাশ করেন যে, অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমান আলোচনায় দলীয় রাজনীতির সংস্কারের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেবেন।

জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় বিএনপি কীভাবে আরও বেশি জবাবদিহি করবে, সে বিষয়েও তাদের আলোচনা করা উচিত বলে মনে করেন আতাউর রহমান।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'যদি সরকার তার অবস্থান পরিবর্তন করে এবং এই বছর নির্বাচন হয়, তবে এটি দেশের উন্নয়নের জন্য একটি পদক্ষেপ হতে পারে।'

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদের ধারণা, বিএনপি সম্ভবত এপ্রিলের নির্বাচন মেনে নেবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, এই বৈঠক ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে, রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে এবং উত্তেজনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

দিলারা চৌধুরী আরও বলেন, 'এটি আলোচনার একটি পথ খুলে দেবে এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে নতুন রূপ দিতে পারে।'

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, 'যদি নির্বাচনের সময় জানুয়ারির শুরু বা ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত হয়, তাহলে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট, অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা সমাধানের একটি পথ বেরিয়ে আসতে পারে।

'সুযোগটি নষ্ট করা উচিত নয় এবং বিএনপি অবশ্যই আলোচনার মাধ্যমে সংকটের একটি যুক্তিসঙ্গত সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে চাইবে।'

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, যদি তারা সংস্কার এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের রূপরেখা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান, তবে এই বৈঠক ভবিষ্যতের রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

SC Secretariat Ordinance: Judges may hold executive posts

Lower court judges will be able to hold executive positions in the law ministry as well as state entities even after the establishment of a Supreme Court secretariat aimed at keeping the judiciary free from the executive’s influence, says a draft ordinance.

4h ago