বিএনপির প্রার্থী যাচাই-বাছাই চলছে

অক্টোবরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে সারা দেশের শত শত মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, মনোনয়নের জন্য চূড়ান্ত করতে হাইকমান্ড দেখছে তাদের জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক শক্তি ও জয়ের সম্ভাবনা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত সপ্তাহে প্রার্থীদের সঙ্গে যৌথ বৈঠক শুরু করেছেন।
ঐক্যের বার্তা দিতে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার সব প্রার্থীকে একসঙ্গে ডাকা হয়েছিল। অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, পরবর্তীতে সবার আলাদা আলাদা সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, 'জরিপ ও মাঠপর্যায়ের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্যতা যাদের রয়েছে' কেবল তাদেরই এই বৈঠকের জন্য ঢাকা হয়েছে।
জ্যেষ্ঠ নেতাদের মতে, সারা দেশ থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইছে প্রায় দেড় হাজার জন।
স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বরিশাল, কুমিল্লা ও রাজশাহীর প্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং মির্জা ফখরুল খুলনা বিভাগের প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
সাতক্ষীরা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাতক্ষীরা-৪ আসনের প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামান জানান, মির্জা ফখরুল ৭ অক্টোবর থেকে চারটি আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
তিনি বলেন, 'মনে হচ্ছে, যেসব আসনে একক প্রার্থী আছে, তারা সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই সিগন্যাল পেয়ে যাবেন।'
মনিরুজ্জামান ও সাতক্ষীরা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী জানান, দলের মনোনয়ন যে পাবে তার পক্ষেই বাকিদের কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন মির্জা ফখরুল।
মনিরুজ্জামান বলেন, 'যারা মনোনয়ন পাবে না, তাদের অন্যভাবে সম্মানিত করা হবে।'
কুষ্টিয়ায় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাকির হোসেন জানান, তিনি গত সোমবার মির্জা ফখরুলের সঙ্গে দেখা করেছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রার্থীদের বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখছে বলেও যোগ করেন তিনি।
বাগেরহাট-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী কাজী খায়রুজ্জামান বলেন, 'আমাকে আমার এলাকায় কাজ করতে বলা হয়েছে। আমি সেই অনুযায়ী কাজ করছি।'
গত ৬ অক্টোবর তারেক রহমান দলের নির্বাচনী অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন, আমরা প্রতিটি এলাকা থেকে এমন একজনকে দলীয় মনোনয়ন দিতে চাই, যিনি স্থানীয় সমস্যা বোঝেন এবং জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বিএনপি প্রায় অর্ধেক প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলেছে। '৩০০ আসনের মধ্যে প্রায় ১৫০টিতে একক প্রার্থী দিতে কোনো সমস্যা নেই। তবে বাকিগুলোতে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া একটু জটিল।'
তিনি বলেন, 'কয়েকটি নির্বাচনী এলাকায় একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী আছে। সেখানে সিনিয়র নেতারা ওই প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন।'
'সব জায়গায় সর্বোচ্চ সমন্বয় নিশ্চিত করতে তারেক রহমান নিজেই স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। আশা করছি এই মাসের মধ্যেই প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষ হবে,' যোগ করেন তিনি।
বিদ্রোহী প্রার্থী যেন কেউ না হয়, সে জন্য মনোনয়ন না পাওয়া নেতাদের বিকল্প পদের আশ্বাস দিয়েছেন বিএনপির হাইকমান্ড।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব এমরান বলেন, 'বিএনপি বড় দল। কাজেই প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থী থাকা স্বাভাবিক। যারা জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না, তাদেরকে জেলা পরিষদ বা উপজেলা চেয়ারম্যানের মতো পদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।'
স্থানীয় নেতারাও একই কথা জানিয়েছেন। এক প্রার্থী বলেন, 'এমপি প্রার্থী হিসেবে আমাদের মনোনয়ন না দিলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও দলীয় পদে আমাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।'
কুষ্টিয়ার আরেকজন প্রার্থী বলেন, 'দল বলেছে, আমরা যদি মনোনয়ন না পাই, তাহলে পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমাদের সমর্থন দেওয়া হবে। তারা চায় আমরা আমাদের এলাকায় সক্রিয় থাকি।'
বাগেরহাটের একজন নেতা বলেন, 'বিএনপি হাইকমান্ড স্পষ্ট করে দিয়েছে যে কেউকেই ফেলে দেওয়া হবে না।'
প্রার্থী মনোনয়নে দেরি হওয়ায় অনেক প্রার্থী কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থীরা প্রচারণার জন্য ঘরে ঘরে যাওয়া শুরু করলেও বিএনপির প্রার্থীরা এখনো দলের নির্দেশনা পাওয়ার অপেক্ষায়।
রাজবাড়ীর একটি আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী এক বিএনপি নেতা বলেন, 'জামায়াত প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই ভোটারদের সঙ্গে দেখা করছেন। কিন্তু আমরা এখনও জানি না যে কে টিকিট পাবে।'
বগুড়ার আরেক প্রার্থী বলেন, 'আমরা দলের নির্দেশনার জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করছি। মানুষ নানা প্রশ্ন করে। কিন্তু আমাদের কাছে কোনো উত্তর নেই।'
ময়মনসিংহের একজন জ্যেষ্ঠ বিএনপি নেতা বলেন, 'প্রতিদ্বন্দ্বীরা ইতোমধ্যেই প্রস্তুতিতে অনেক এগিয়ে আছে। আর আমাদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া এখনও চলছে।'
Comments