ইসির নির্বাচনী পরিকল্পনায় জামায়াতের ছায়া: অভিযোগ বিএনপির

ছবি: সংগৃহীত

প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একাংশের কর্মকর্তারা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

তাদের আশঙ্কা, এই কর্মকর্তারা জাতীয় নির্বাচনকে জামায়াতের পক্ষে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নির্বাচনের আগে তাদের উদ্বেগ উত্থাপন ও 'জরুরি সংশোধনমূলক ব্যবস্থা' চাইতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে পৃথকভাবে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, 'বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল শিগগির এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও সিইসির সঙ্গে দেখা করবে।'

সোমবার রাতে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত বেশ কয়েকজন সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি এই সভায় যোগ দিয়েছিলেন।

একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, 'যদি জামায়াত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে ভোট কারচুপি বা নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন।'

দলীয় সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান শিগগির নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করবেন।

বিএনপি নেতারা বলেছেন, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকের জন্য সময় চাইবেন এবং দলীয় কর্মকর্তাদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জমা দেবেন।

তাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ বিগত নির্বাচনগুলোতে রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে ভোট কারচুপি করেনি, করেছে 'নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী সরকারি কর্মকর্তাদের' ব্যবহার করে। একই কৌশলের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছে বিএনপি।

বৈঠকে উপস্থিত স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, 'ইতোমধ্যেই ডিসি, এসপি ও ইউএনওসহ বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তার সংযোগ রয়েছে জামায়াতের সঙ্গে।'

তিনি বলেন, 'আমি শুনেছি, ইসলামী ব্যাংকের প্রায় চার হাজার কর্মকর্তা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করবেন। এগুলোই উদ্বেগের।'

আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্যানেল চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন।

গত ২ সেপ্টেম্বর এক সার্কুলারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সরকারি অফিস, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি থেকে নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়ে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছে।

স্থায়ী কমিটির সভায় বিএনপি নেতারা বলেন, যাদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তাদের অনেকেই একসময় শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অথবা বর্তমানে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।

তারা বলেন, তাদের নিজস্ব জরিপ ও স্থানীয় তথ্য থেকে সরকারি অফিস, স্কুল ও কলেজে বিভিন্ন পদে জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিকে খুঁজে পেয়েছেন।

তাদের অভিযোগ, স্কুল ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিদেরও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং সেখানে দলীয় ব্যক্তিদের বসানো হয়েছে।

কয়েকজন উপদেষ্টার সাম্প্রতিক মন্তব্য ও কার্যক্রমও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে তাদের অভিমত।

বিএনপি নেতারা বলেছেন, প্রশাসনে পরিবর্তন ও নিয়োগের ক্ষেত্রে কয়েকজন উপদেষ্টা পক্ষপাতমূলক অবস্থান দেখিয়েছেন এবং একটি 'নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠী'কে সমর্থন করেছেন।

তারা অভিযোগ করেন, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুত করার সময় 'একটি দলের' সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে এবং তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

জুলাই সনদ

বিএনপি আবারও জানিয়েছে, তারা জুলাই সনদে সই করতে প্রস্তুত। ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানে ১০০ জনেরও বেশি নেতার একটি প্রতিনিধি দল যোগ দেবেন, যেখানে দলের পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সনদে সই করবেন।

গণভোটের বিষয়েও বিএনপির অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। তারা চায়, গণভোট হলে জাতীয় নির্বাচনের দিনেই হতে হবে এবং তারা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন মেনে নেবে না।

বৈঠকে নির্বাচনের জন্য সাংগঠনিক প্রস্তুতিও পর্যালোচনা করা হয়েছে। সেখানে নেতারা মাঠপর্যায়ের প্রচারণায় দুর্বলতা মেনে নিয়েছেন এবং দলের মিডিয়া ও জনসংযোগ সেলগুলোকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

তারা বিএনপিকে লক্ষ্য করে অনলাইনে ব্যাপক প্রচারণা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণার মাধ্যমে এসব বিষয় মোকাবিলার কৌশল নিয়েও আলোচনা করেন।

Comments