আন্দোলন বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে দিন, পরে তর্ক-বিতর্ক করা যাবে: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের মানুষ ভোট দিতে চায়। দয়া করে আন্দোলন বাদ দিয়ে নির্বাচন শেষ করতে দিন। তারপর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করা যাবে।
আজ বুধবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদরে বিএনপি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় অন্যান্য দলের প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা নির্বাচিত হলে বিএনপি নির্বাচিত হলে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে। সেটা নিয়ে বাড়ির নারীরা বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানে গেলে তাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।'
'আমাদের হাসপাতালে আমরা চিকিৎসা পাই না। স্বাস্থ্যসেবাকে আমরা উন্নত করব। শিক্ষাখাতে অর্থ বাড়াব, স্কুল-কলেজগুলোতে কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দেবো,' বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমরা আগে সরকারে ছিলাম। সরকার কীভাবে চলে তা জানি। সরকারে থেকে কীভাবে ভালো কাজ করতে হয়, তাও জানি।'
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য আমরা লড়াই সংগ্রাম করেছি। যে জন্য আমাদের ছেলেরা প্রাণ দিয়েছে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ যেটা চাইবে, সেটাই হবে।'
'এই ব্যবস্থাটা এবার কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে। এখন থেকে দুইটা পার্লামেন্ট থাকবে, একটা নিম্নকক্ষ, আরেকটা উচ্চকক্ষ। নিম্নকক্ষে যারা যাবেন তারা আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হবেন,' যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'দলের যে প্রতিনিধি সংখ্যা থাকবে, এই সংখ্যা অনুযায়ী তারা উচ্চকক্ষে যাবেন। এরপরেও বিভিন্ন সেক্টরের মানুষকে সেখানে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এভাবে এমন একটি পার্লামেন্ট তৈরি করা হবে, যেখানে সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। কোন দলের একক কর্তৃত্ব থাকবে না। ফ্যাসিজম থেকে আমরা মুক্তি পাব।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আমাদের সামনে নতুন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে। এখন আমরা দেশটাকে সুন্দর করে সাজাতে চাই।'
'আমাদের মধ্যে অনেক মত আছে। এই মতগুলোকে এক জায়গায় আনতে হবে। আর সেই জায়গাটা হল পার্লামেন্ট। এখানে তর্ক হবে, বিতর্ক হবে সেখান থেকে আমরা সিদ্ধান্ত পাব,' বলেন তিনি।
'হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই মিলেমিশে থাকাটাই আমাদের বাংলাদেশ' মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'হিংসার রাজনীতি আমরা আর চাই না। আমরা হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের মধ্যে কোনো বিভেদ সৃষ্টি করতে চাই না। হিংসার রাজনীতিকে প্রশ্রয় দিতে চাই না। চাই শান্তির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধকে আমরা কখনো ভুলব না। কারণ এদেশের স্বাধীনতা আমাদের অস্তিত্ব। এটাকে ভুলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একইভাবে ৫ আগস্টকে আমরা ভুলব না। কারণ সেসময় আমাদের ছেলেরা বুকের রক্ত দিয়ে দেশ থেকে স্বৈরাচারকে তাড়িয়ে ছিল। এই যে একসঙ্গে নিয়ে চলা এটাই নতুন বাংলাদেশ।'
তিনি আরও বলেন, 'দেশকে আর ভাগাভাগি করবেন না। বহু ক্ষতি হয়ে গেছে, আর ক্ষতি চাই না। সবাইকে নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চাই। ভালোবাসার মধ্য দিয়ে, সৌহার্দ্যের মধ্য দিয়ে, ভ্রাতৃত্বের মধ্যে দিয়ে এই দেশটাকে তৈরি করতে চাই।'
অন্যান্য দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'দয়া করে দেশটাকে বাঁচান। এখন আর বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। এখন বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে দেশটাকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিবেন না।যারা বিভিন্ন দাবি তুলছে তাদের উদ্দেশ্য ভালো না। তারা নির্বাচন বন্ধ করতে চায়।'
'কিন্তু দেশের মানুষ ভোট দিতে চায়। দয়া করে এসব আন্দোলন বাদ দিয়ে নির্বাচনটা শেষ করতে দিন। জনগণের প্রতিনিধি আসুক, তারপর এসব বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করা যাবে,' বলেন তিনি।
এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেনসহ স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
Comments