প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক

ইসি-প্রশাসন-পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল জামায়াত

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে জামায়াতের প্রতিনিধিদল। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের 'কয়েকজন' উপদেষ্টা, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন এবং পুলিশের নিরপেক্ষতা প্রশ্ন তুলেছেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।

তিনি বলেছেন, 'আপনারা জানেন ইলেকশন কমিশনে, সচিবালয়ে, পুলিশ প্রশাসনে আজকে সেখানে প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ অফিসারই একই দলের আনুগত্য করছে। আমরা গেলে তারা বলেন, প্রচণ্ড চাপ। তো চাপ কোথা থেকে আসছে? একটি দল থেকে আসছে। পুলিশেও একই অবস্থা।'

একইভাবে নাম উল্লেখ না করে সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা। 

আজ বুধবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে তাহের সাংবাদিকদের বলেন, 'সরকারের যারা উপদেষ্টা আছেন তাদের ব্যাপারে (প্রধান উপদেষ্টাকে) বলেছি, সবার ব্যাপারে নয়। আমরা বলেছি, কিছু কিছু লোক (উপদেষ্টা) আপনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) বিভ্রান্ত করে। আপনার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। কিন্তু আপনার কিছু লোক কোনো একটা দলের পক্ষে কাজ করে। আমরা মনে করি, তাদের ব্যাপারে আপনার হুঁশিয়ার থাকা দরকার।'

'আমরা তাদের (উপদেষ্টাদের) অপসারণ চাইনি। দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আপনাকেও সুযোগ দিচ্ছি। যদি না হয়, তাহলে আমরা যা যা করণীয় সে ব্যাপারে চিন্তা করব', যোগ করেন তিনি।

বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো দাবি তোলা হয়নি বলেও জানান তাহের। তিনি বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে আমরা আলোচনা করিনি দুটি কারণে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে এখনো সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হচ্ছে। আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষায় আছি। সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দেবেন, সেই লাইনে আমরা তখন কেয়ারটেকার ইস্যুটা আমরা আলোচনায় আনবো। কারণ এখনই যদি আমরা এটা (আলোচনা) করি, তাহলে এটা ইমম্যাচিউর হবে। আমরা মনে করি, এই সরকার এখন যেটি ইন্টেরিম আছে, তারা এখন ইন্টেরিমই থাকবে। যদি কোনো ব্যত্যয় না হয় সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারে, তাহলে এই সরকারই কেয়ারটেকার সরকারের ভূমিকা পালন করবে।'

নির্বাচনের আগে প্রধান উপদেষ্টাকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির তাগিদ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, 'আমরা বলেছি আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) কেয়ারটেকার গভমেন্টের মতো আছেন, নিরপেক্ষ সরকার, আপনি এটাকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করেন। সবার জন্য সমতল ভূমি তৈরি করেন এবং নির্বাচনের আগে যেখানে যেখানে রদবদল করা দরকার আপনি রদবদল করেন।'

তাহের আরও বলেন, 'সেক্ষেত্রে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) আমাদের বলেছেন, উনি নিজে এটা তত্ত্বাবধান করবেন এবং লটারি সিস্টেমে উনি পোস্টিং ঠিক করবেন। আমরা বলেছি, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আপনি লটারি করেন। তবে লটারির পেছনে কোনো একটা ভূত যেন দাঁড়াইয়া না থাকে, এটা দেখতে হবে।'

'আমরা সেখানে (বৈঠকে) বলেছি, একটি আদেশের মাধ্যমে এটাকে (জুলাই জাতীয় সনদ) সাংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে। এটা কনস্টিটিউশন নয়। এটা হচ্ছে এক্সট্রা কনস্টিটিউশনাল অ্যারেঞ্জমেন্ট। যেটা কোনো সরকার এরকম একটি পরিস্থিতি পড়লে দেওয়ার এখতিয়ার রাখে।  উনি আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন, একটা আদেশের মাধ্যমে এটা হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'একটি আদেশের মাধ্যমেই এটাকে (জুলাই সনদকে) বৈধতা দিতে হবে। আর সেই আদেশের ওপরেই গণভোট হবে। আমরা এটা ক্লিয়ারলি বলে আসছি। উনি (প্রধান উপদেষ্টা) আমাদের কথায় কনভিন্স হয়েছেন বলে আমাদের মনে হয়।'
 
গণভোট প্রসঙ্গে তাহের বলেন, 'আপনারা জানেন গণভোটের ব্যাপারে বিএনপি কোনোভাবে রাজি হচ্ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপি গণভোটে রাজি হয়েছে। আমরা বিএনপিকে ধন্যবাদ জানাই। তারপরেও তারা একটা জটিলতা তৈরি করার চেষ্টা করছে। সেটা হচ্ছে, গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন একদিন হতে হবে। দুইটা একেবারে আলাদা জিনিস।'

'যেহেতু তারা (বিএনপি) গণভোট চায় নাই, জনগণের চাপে সেন্টিমেন্ট দেখে তারা রাজি হয়েছে, কিন্তু প্যাঁচ একটা লাগায় রাখছে। আমরা (বৈঠকে) বলে আসছি, এখানে কোনো প্যাঁচ আমরা বুঝি না। সহজ-সরলভাবে গণভোট আগে হতে হবে', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'এই যে রিফর্মস হচ্ছে এটার যে ডিক্লারেশনটা বা আদেশটা কে দেবে? এ নিয়ে একটা প্রশ্ন উঠেছে। আমরা বলেছি, যদি আইনে কাভার করে এবং আইনগতভাবে যদি কোনো ব্যত্যয় না ঘটে তাহলে আমরা চাই চিফ অ্যাডভাইজার এই আদেশটি দেবেন। প্রেসিডেন্ট এটা দেবে না। কারণ এই প্রেসিডেন্ট কাদের প্রোডাক্ট আপনারা জানেন।'

'ওনারা আমাকে বলেছেন, আইনগত দিকটা পর্যালোচনা করবেন। যদি আইনগত কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে প্রেসিডেন্ট নয়, এই ঘোষণাটা প্রধান উপদেষ্টাই দেবেন।'

বৈঠকে তাহেরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম ও রফিকুল ইসলাম খান।

Comments

The Daily Star  | English

Water lily tug-of-war continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June..Despite several exchanges of letters and multiple meetings between NCP and the chief election commissioner, other

2h ago