আদরের ছোট ছেলে সাঈদের মৃত্যুতে পাগলপ্রায় মা, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন

সংঘর্ষে নিহত বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (বামে, ছবি: ফেসবুক)। গুলিবিদ্ধ হওয়ার কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে সাঈদকে রাস্তায় বুক পেতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে (ডানে ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া)

রংপুরে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২৩) ছিলেন পরিবারের সবার ছোট। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে আবু সাঈদের শিক্ষাজীবন ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল।

তার এক ভাই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন, অন্যরা পড়েছেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যন্ত। তাই পুরো পরিবারের স্বপ্ন ছিল আবু সাঈদকে ঘিরে।

আজ আদরের ছোট ভাইকে হারিয়ে হতভম্ব বড় ভাই রমজান। শীতল কণ্ঠে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার বাবা মকবুল হোসেন শারীরিক অসুস্থতায় শয্যাশায়ী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে আবু সাঈদ ছিল সবচেয়ে মেধাবী। তাই পরিবারের সবার উপার্জন দিয়ে তাকে এতদূর পর্যন্ত পড়ালেখা চালিয়ে নিয়ে এসেছি। একদিন সে অনেক বড় হবে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে সে আশা ছিল।'

আদরের ছোট ছেলের মৃত্যুর খবরে পাগল প্রায় মা মনোয়ারা বেগম। কান্নায় ভেঙে পড়ছেন, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

অকাল এই মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ পুরো গ্রাম।

পীরগঞ্জ উপজেলার মনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন স্টারকে বলেন, 'সাঈদ ছিল ওই পরিবারের উজ্জ্বল নক্ষত্র। সব ভাইবোনের মধ্যে সেই উচ্চ শিক্ষার দিক প্রসারিত করছিল। কিন্তু শেষ সময়ে এসে ঝরে গেল সেই স্বপ্ন।'

'আবু সাঈদ যেমন মেধাবী ছিল, ঠিক তেমনি নম্র ও ভদ্র স্বভাবের ছেলে। তার মৃত্যুতে আমরা গ্রামবাসী গভীর শোকাহত,' বলেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহরের খামার মোড় থেকে কোটা আন্দোলনকারীরা জড়ো হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেটে এসে অবস্থান নেয়।

এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সঙ্গে মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যুক্ত হয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করতে থাকে। আন্দোলনকারীরাও পুলিশ এবং ছাত্রলীগকে ধাওয়া করতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে।

পরে আহত শতাধিক শিক্ষার্থীদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু সাঈদকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে বেরোবির বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, আবু সাঈদ কোটা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। আন্দোলনে বেরোবি ক্যাম্পাসের সমন্বয়কদের একজন ছিলেন তিনি। তার শরীর গুলিবিদ্ধ এবং দেহে ছররা গুলির অসংখ্য চিহ্ন রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Ignore Gen Z at your peril, experts tell Nepal govt

Prominent personalities warn government and parties not to dismiss the demands of youths

2h ago