বন্দরনগরীতে বৈশাখী মেলা, জব্বারের বলী খেলা কাল

জব্বারের বলি খেলা লালদীঘি ময়দানে চলছে প্রস্তুতি। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানের পাশের সড়কে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। 

একশ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে আয়োজিত হচ্ছে ঐতিহাসিক এ মেলা। চট্টগ্রাম শহরের বদরপাতি নিবাসী বিশিষ্ট বণিক আব্দুল জব্বার সওদাগর বাংলা ১৩১৬ (১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দ) সালের ১২ বৈশাখ লালদীঘি ময়দানে কুস্তি প্রতিযোগিতার সূচনা করেন।

আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা উদযাপন পরিষদ প্রতিবছর একইস্থানে আয়োজন করে বলি খেলা।

আজ বুধবার মেলা শুরু হলেও বলী খেলা অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। এবার এই প্রতিযোগিতার ১১৫তম আসর অনুষ্ঠিত হবে।

তিন দিনের মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য, বিশেষ করে হস্তশিল্প প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য অস্থায়ী দোকান স্থাপন করেছেন।

জব্বারের বলি খেলাকে কেন্দ্র করে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

চট্টগ্রাম জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের কারণে প্রচণ্ড গরমে প্রথম দিনে মেলায় দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল খুবই কম। 

তবে মেলার পরের দুই দিন সন্ধ্যায় দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভিড় হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।  

এবারের জব্বারের বলী খেলায় মোট ১০০ জন কুস্তিগির অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং মেলা ও প্রতিযোগিতা আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান জহর লাল হাজারী। 

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আগামীকাল রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।  

যুবকদের শারীরিকভাবে সুস্থ রেখে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করার লক্ষ্যে আব্দুল জব্বার বলী খেলার প্রচলন করেছিলেন।

ঐতিহাসিক তাৎপর্য ছাড়াও মেলার ব্যবহারিক তাৎপর্যও আছে। বন্দরনগরীর বাসিন্দারা তাদের রান্নাঘর ও গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে সারা বছর ধরেই এই মেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন।

মেলাটি অর্থনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের হস্তশিল্পসহ গৃহস্থালীর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রির জন্য সারা বছর এই বৈশাখী মেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন।   

আজ সরেজমিনে দেখা গেছে, আন্দরকিল্লা মোড় থেকে কোতয়ালী মোড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কজুড়ে অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ব্যবসায়ীরা।

তারা গৃহস্থালি ও রান্নাঘরের বাসন, মৃৎশিল্প, খেলনা, মিষ্টি, ঝাঁড়ু, পাটি, আসবাবপত্র, কাঠ ও বাঁশের তৈরি শো-পিস, বেতের জিনিসপত্র, গাছের চারা, মাছ ধরার জালসহ সব ধরনের হস্তশিল্প বিক্রি করছেন।

আন্দরকিল্লা মোড়ে ঝাড়ু বিক্রি করছিলেন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার ব্যবসায়ী নুরুল আমিন। তিনি একজোড়া ফুল-ঝাড়ু ১৮০ টাকায় এবং লাঠি-ঝাড়ু ১২০ টাকায় বিক্রি করছিলেন।

মেলায় দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, যত দিন যাবে, মেলায় বেচাকেনা তত বাড়বে।

নারী দর্শনার্থীদের তার দোকানে ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে ভিড় করতে দেখা গেছে। বাকালিয়া এলাকার বাসিন্দা রুমি বড়ুয়াকে ফুল-ঝাড়ু কিনতে দেখা গেছে। তিনি জানান, প্রতিবছর মেলা থেকে  তিনি ঝাড়ু কেনেন।

তিনি বলেন, 'মেলায় মানসম্পন্ন ঝাঁড়ু কম দামে বিক্রি হয়, তাই আমি মেলা থেকে কিনে নিই।'

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসায়ী মো. বাশার কেসি দে সড়কে চাটাই বিক্রি করছিলেন। তিনি জানান, মেলায় তিনি পাটি (কার্পেট) বিক্রি করছেন। বাশার বলেন, 'বেচা-বিক্রি ভালো হচ্ছে।'

হস্তশিল্প সামগ্রী কিনতে হাফিজ উদ্দিনের দোকানে প্রচুর দর্শনার্থীকে ভিড় করতে দেখা গেছে। তিনি ফ্রাই প্যান, কাঠের ঘূর্ণায়মান বোর্ড, ঘূর্ণায়মান লাঠি, জলচৌকি (কাঠের আসন), হাঁড়ি, হাতুড়ি, যাঁতি, দা বিক্রি করছিলেন।
 

Comments

The Daily Star  | English

15 military officers held in army custody taken to ICT amid tight security

The accused were brought to the tribunal premises around 7:00am amid tight security.

9m ago