গ্রেপ্তার ‘ছাত্রলীগ কর্মীকে’ থানা হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ
চট্টগ্রামে নিষিদ্ধঘোষিত 'ছাত্রলীগের এক কর্মীকে' গ্রেপ্তারের পর থানায় নিয়ে মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আজাদের বিরুদ্ধে।
গ্রেপ্তার আলী আক্কাস জুয়েলকে (৩৭) পুলিশ ছাত্রলীগের কর্মী বললেও তিনি শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় করা সন্ত্রাস দমন আইনসহ ৭ মামলায় জুয়েলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
জুয়েলের পরিবারের দাবি, ফেসবুকে ওসির বিরুদ্ধে পোস্ট দেওয়ায় তাকে গ্রেপ্তারের পর ওসির রুমে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
অন্যদিকে পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারের সময় ধস্তাধস্তি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে এবং স্থানীয় জনতা আটককালে জুয়েল সামান্য আহত হয়েছেন।
আদালতে জমা দেওয়া পুলিশের নথিতে বলা হয়েছে, গত ১০ অক্টোবর ডবলমুরিং থানা এলাকায় আওয়ামী লীগ ও এর অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে নাশকতা সৃষ্টির জন্য সরকারবিরোধী মিছিল বের করে। এ ঘটনায় করা মামলায় জুয়েল সন্দেহভাজন আসামি। শুক্রবার দিবাগত রাতে আগ্রাবাদ লাকী প্লাজার সামনে থেকে জুয়েলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নথিতে আরও বলা হয়, জুয়েল পলাতক ছিলেন এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় সদস্য। পুলিশের সিডিএমএসে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে।
নথিতেও পালিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে এবং জনতার হাতে জুয়েলের আহত হওয়ার কথা উল্লেখ আছে।
পরে তাকে নগরীর জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এদিকে জুয়েলের পরিবারের দাবি, তাকে শুক্রবার দুপুরে জুমার আগে লাকী প্লাজার সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জুয়েলের স্ত্রী ইসরাত আরা ইনা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার স্বামীকে গত শুক্রবার দুপুরে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থানা থেকে ফোন দেওয়া হয়। আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার শাশুড়িসহ থানায় যাই। তখন জুয়েল থানার লকআপে ছিলেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা রাত পর্যন্ত থানার বাইরে অপেক্ষা করি। শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে থানায় ওসি আসেন। তিনি আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। এরপর আমাদের আর থানার ভেতর ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমি বাইর দেখতে পাই জুয়েলকে ওসির রুমে নেওয়া হচ্ছে। এরপর ভেতর থেকে জুয়েলের আর্তনাদ শোনা যায়। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে নির্যাতন চালানো হয়েছে সেদিন।'
ইসরাত আরও বলেন, 'রাত ৩টার দিকে ওসির রুম থেকে তাকে লকআপে নেওয়া হয়। পুলিশ পরে আমাদের থানা চত্বর থেকে বের করে দেয়।'
তিনি আরও বলেন, 'শনিবার সকালে আমি নাস্তা নিয়ে দেখা করতে গেলে কিছু সময়ের জন্য কথা বলার সুযোগ পাই। লকআপের কাছে গিয়ে দেখি তার হাতে গুরুতর জখম, তিনি হাঁটতে পারছেন না। জুয়েল আমাকে জানান, সকালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তার দেখানো হয়েছে।'
'আমার স্বামী রাজনীতি করেন এটা সত্য। তিনি ওসিকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। কিন্তু রাজনীতি করার জন্য এবং ফেসবুকে লেখার জন্য এভাবে একজন মানুষকে পেটানো হবে তা আমার কল্পনায় ছিল না। শনিবার বিকেলে আদালতে নিয়ে গেলেও সেখানে তিনি হাঁটতে পারেননি। তাকে ধরে ধরে হাঁটানো হয়েছে। থানায় সিসিটিভি দেখলেই নির্যাতনের বিষয়টি আসবে', বলেন তিনি।
ডেইলি স্টারের হাতে আসা কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আদালত চত্বরে তিনজন পুলিশ সদস্য তাকে ধরে হাঁটাচ্ছেন। জুয়েল খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। একটি ছবিতে তার হাতের কনুইয়ে জখম দেখা যায়।
এ বিষয়ে জুয়েলের আইনজীবী মাহমুদুল্লাহ মোজাহের ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এগুলো নির্যাতনের দাগ। পাবলিক মারলে বেছে বেছে মারে না। আমরা এগুলো আদালতের নজরে এনেছি। আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার চিকিৎসার জন্য আদালত জেল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।'
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডবলমুরিং থানার ওসি বাবুর আজাদ মোবাইল ফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রেপ্তারের সময় জুয়েল পড়ে গিয়ে সামান্য আহত হয়েছেন।'
সামান্য আহত হলে তাকে কেন পাঁচ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে নেওয়া হলো, এমন প্রশ্নে উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, 'আমি কোথায় নেব, সেটা আপনার বিষয় নয়।' এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।


Comments