বিলিভ ইট অর নট

ক্যাট-ফক্স: না বিড়াল না শেয়াল

ক্যাট-ফক্স: না বিড়াল না শেয়াল
কোরসিকা দ্বীপের বিড়াল-শেয়াল। ছবি: সংগৃহীত

ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত কোরসিকা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের চতুর্থ বৃহত্তম দ্বীপ। এই দ্বীপেই জন্মেছিলেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। বর্তমানে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার লোকের বাস সেখানে। তবে ওই দ্বীপের সবচেয়ে আদুরে ও চতুর প্রাণিটিকে দেখা যায় কালেভদ্রে। 

ওই প্রাণাটি হলো এক প্রকারের বিড়াল, স্থানীয়রা ডাকে 'ঘজাত্তু ভলপি' বলে। না, কাঠখোট্টা এই নাম শুনে এত অবাক হবেন না। সহজ কথায় এটি হলো ক্যাট-ফক্স বা শেয়ালের মতো প্রজাতির বিড়াল।
 
কোরসিকার লোককথায় বহু আগে থেকেই ছিল এদের উপস্থিতি। তবে এরা আলাদা প্রজাতি হিসেবে আবিষ্কৃত হয়েছে সম্প্রতিকালে। 

সেটাও হয়েছিলো মুরগির খাঁচা থেকে। ২০০৮ সালে ওলকানি নামে কর্সিকার এক সম্প্রদায় খাঁচায় আটকে পড়া বিড়াল জাতীয় একটি প্রাণী উদ্ধার করে। 

পুরাণে এদের উল্লেখ করা হয়েছে একরকম আপদ হিসেবে। তার কারণ এরা আসে জঙ্গল থেকে, আক্রমণ করে ছোট বাছুর ও ভেড়াদের! এ কারণেই শেয়ালের সঙ্গে তুলনা করা হয় এদের। বলা হয় বিড়াল-শেয়াল।
 
বিজ্ঞানীরা কাঠের গুড়িতে পাওয়া এদের লোম থেকে ডিএনএ পরীক্ষা করেছেন। গবেষণায় তারা দেখছেন, ইউরোপীয় বন্য বিড়ালগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নেই এদের। বরং, এরা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এই দ্বীপে থাকা স্বতন্ত্র এক প্রজাতি! ডিএনএ পরীক্ষায় এদের একটি স্বতন্ত্র গঠন পেয়েছেন তারা। 

ফ্রান্সের জীববৈচিত্র‍্য দপ্তর জানাচ্ছে, 'জিনগত নমুনা থেকে আংটির মতো প্যাঁচানো লেজওয়ালা এই বিড়াল-শেয়ালদের সঙ্গে বন বিড়াল ও পোষা বিড়াল; উভয়েরই পার্থক্য পরিষ্কারভাবে চোখে পড়ছে।' এদের স্বতন্ত্র ও অভিনব বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে তারা নতুন অনেক তথ্য পাচ্ছেন।

বিড়াল-শেয়ালদের আছে খুব উন্নতমানের ছেদন দাঁত, সংক্ষিপ্ত  গোঁফ ও অতি প্রশস্ত কান। লেজ থেকে মাথা পর্যন্ত তারা পায় ৩৫ ইঞ্চি দীর্ঘ। তাদের আছে আংটার মতো লেজ, এটা অন্য বিড়ালদের থেকে স্পষ্টতই তাদের আলাদা করে। ২ থেকে ৪টি রিং তৈরি হয় তাদের লেজে, শেষ মাথায় থাকে কালো দাগ। তাদের গায়ের লোম ঘন ও রেশমি, এতে তারা রক্ষা পায় বিভিন্ন ক্ষতিকর কীটদের সংক্রমণ থেকে। তাদের পেছনের পা হয় বেশ কালো, সামনের পায়ে থাকে ডোরাকাটা দাগ। পেটের দিকটা হয় লালচে-বাদামি। 

কিন্তু এদের সচরাচর দেখা যায় না কেন? সেটি মূলত আত্মরক্ষার কৌশল। এদের শিকার করতে খুব পছন্দ করে সোনালি ঈগল। যদিও শেয়ালিয় বিড়ালরা নিজেরাও ছোট পাখিদের খেয়ে থাকে। তবে ঈগল বা অন্য শিকারি পাখিদের এড়ানোর জন্য এরা ঘন জঙ্গলে থাকে। এমন জায়গা সচরাচর বেঁছে নেয়, যেখানে প্রচুর গাছ ও পর্যাপ্ত পানি আছে। 

২০১৬ থেকে এখন পর্যন্ত গবেষণার জন্য ফাঁদ পেতে এমন ১২টি বিড়াল ধরা হয়েছে। তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য নিয়ে। প্রচুর তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে গবেষকরা মনে করছেন এই বিড়ালরা স্বতন্ত্র একটি প্রজাতি, এদের স্বীকৃতি ও সংরক্ষণের প্রতি নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

 

তথ্যসূত্র: রিপলিস বিলিভ ইট অর নট

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়
 

Comments

The Daily Star  | English

Water lily tug-of-war continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June..Despite several exchanges of letters and multiple meetings between NCP and the chief election commissioner, other

2h ago