টুপাক শাকুর: র‍্যাপ গানের আগুনপাখি

টুপাক শাকুর। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

১৯৯৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। ৬ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চিরতরে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিলেন টুপাক শাকুর। নব্বই দশকে আমেরিকায় র‍্যাপ গানের মাধ্যমে ঝড় তোলা এই শিল্পীর জীবনপ্রদীপ নিভে যায় ঘাতকের গুলির আঘাতে, মাত্র ২৫ বছর বয়সেই। 

মা আফেনি শাকুর ছিলেন বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ। যুক্ত ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারের জন্য লড়া ও তাদের মুক্তির গান গাওয়া 'ব্ল্যাক প্যান্থার পার্টি'র সঙ্গে। শৈশব থেকেই সেই দ্রোহ ছাপ ফেলেছিল টুপাকের মনে। 

২পাক ও মাকাভেলি নামেও পরিচিত ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে '২পাকালিপস নাউ' অ্যালবামের মাধ্যমে সংগীত জগতে পদার্পণ ঘটে তার। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত 'স্ট্রিক্টলি ফর মাই নি.গ.গা.স' তাকে এনে দেয় খ্যাতি। এরপর থেকে আমৃত্যু টুপাক তার গানের মাধ্যমে প্রশ্ন করেছেন কর্তৃত্ববাদকে। তুলে এনেছেন আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনাচরণকে। উঁচু অট্টালিকার বিপরীতে বস্তিতে থাকা মানুষদের জীবনের কথা তুলে এনেছেন কণ্ঠে। এর উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে রয়েছে 'মি এগেইন্সট দ্য ওয়ার্ল্ড' (১৯৯৫) ও 'অল আইজ অন মি' (১৯৯৬)। 

'উই নেভার হ্যাড এ চান্স টু এপ্রিশিয়েট লাইফ/দ্য গভর্নমেন্ট গট আ প্লান টু এলিমিনেট দ্য লাইফ অব এভরি ব্ল্যাক সোল অন দ্য স্লেভারি ল্যান্ড' -নিজের লেখা ও সুরে গাওয়া র‍্যাপ গান 'দ্য গভর্নমেন্ট'-এ এভাবেই তীক্ষ্ণ বাক্যবাণে বিঁধেছিলেন সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে। বহুকাল থেকে বর্ণবৈষম্যের শিকার হতে থাকা কালো মানুষদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন টুপাক। 

'চেঞ্জ' নামের গানটিতে যেমন বলছেন- 'টেক দ্য ইভিল আউট অব পিপল, দে উইল বি অ্যাক্টিং রাইট, "কজ বোথ ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ইজ স্মোকিন" ক্র‍্যাক টু নাইট'। এই গানেও কৃষ্ণাঙ্গদের বঞ্চনা নিয়েই কথা বলেছেন টুপাক। আমেরিকা এখনো 'কৃষ্ণাঙ্গ' কোনো প্রেসিডেন্ট পেতে প্রস্তুত নয় বলেই উল্লেখ করেছিলেন তিনি। (মৃত্যুর এক যুগ পর অবশ্য আমেরিকা পেয়েছিল তাদের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে- যা টুপাক দেখে যেতে পারেননি)।

টুপাকের বহুল আলোচিত ও চর্চিত একটি গান 'রেভুলেশন'। যে গানের শিরোনাম 'বিপ্লব', সেই গানে সত্যিকারার্থেই বিদ্রোহের তপ্ত আগুন জ্বালিয়েছেন টুপাক। 'দ্য কান্ট্রি ওয়াজ বিল্ট অন গ্যাংস, ইউ নো, আই থিংক দিস কান্ট্রি স্টিল ইজ রান অন গ্যাংস, রিপাবলিকানস, ডেমোক্রেটস, দ্য পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, দ্য এফবিআই, দ্য সিআইএ, দোজ আর গ্যাংস, ইউ নো হোয়াট আই মিন...' 

রক্ষকের ভক্ষক হয়ে ওঠার ব্যাপারটি এই গানে একদম স্পষ্ট ভাষায় তুলে এনেছেন টুপাক। প্রশ্ন করে ছাড়েননি কাউকেই। কারেকশনাল অফিসার নামক শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই নিউইয়র্কের সবচেয়ে বড় 'গ্যাং' বলতে বাদ রাখেননি টুপাক। সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, অপরাধকে নিছক ব্যক্তিক কার্যক্রম হিসেবে দেখেননি তিনি। কোনো অপরাধকে বিচ্ছিন্নভাবে না দেখে তার সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজেছেন রাষ্ট্রীয় নানা প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও রাজনৈতিক দলের। এর ফলে যাদের জনগণের সেবক হয়ে ওঠার কথা, তাদের মাধ্যমেই সংঘবদ্ধভাবে ঘটা নিপীড়নের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন টুপাক। 

'ডিয়ার মামা' গানে উল্লেখ করেছেন নিজ মা আফেনির সংগ্রামের কথা। 'আই ফাইনালি আন্ডারস্ট্যান্ড ফর এ উইমেন ইট এইনট ইজি ট্রাইন টু রেইজ এ ম্যান/ইউ অলওয়েজ ওয়াজ কমিটেড/এ পুওর সিঙ্গেল মাদার অন ওয়েলফেয়ার, টেল মি হাউ ইয়া ডিড ইট'- নিজের মায়ের জীবনের সংগ্রামকে এভাবেই গানে তুলে এনেছেন টুপাক। বিদ্রোহের প্রথম পাঠটিও তিনি পেয়েছিলেন মায়ের কাছ থেকেই। 

নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও টুপাক সোচ্চার হয়েছিলেন গানে। 'কিপ ইয়া আই লিড আপ' গানে তিনি গেয়েছেন, 'অ্যান্ড সিন্স উই অল কাম ফ্রম ওম্যান/গট আওয়ার নেম ফ্রম এ ওম্যান অ্যান্ড আওয়ার গেম ফ্রম এ ওম্যান/আই ওয়ান্ডার হোয়াই উই টেক ফ্রম আওয়ার ওম্যান/হোয়াই উই রেপ আওয়ার ওম্যান, ডু উই হেইট আওয়ার ওম্যান'। 

টুপাকের গানের কথা এত স্পষ্টভাবে কোনো বিষয়কে তুলে ধরত যে, মনেই হত না আলাদাভাবে এ নিয়ে ভাবনার কিছু আছে। আকারে-ইঙ্গিতে নয়, সোজা কথা সোজা-সাপ্টা ও স্পষ্ট ভাষায় কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন তিনি। 

নিরাশায় ডুবে যাওয়া তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছে তার গান। 'আনকন্ডিশনাল লাভ' এর কথাই ধরা যাক। টুপাক গাইলেন, 'দিস ফাস্ট লাইফ সুন শ্যাটারস/কজ আফটার অল দ্য লাইটস অ্যান্ড স্ক্রিমস/নাথিং বাট মাই ড্রিমস ম্যাটার/হোপিং ফর বেটার ডেইজ/মে বি আ পিসফুল নাইট, বেবি ডোন্ট ক্রাই/কজ এভরিথিং গনা বি অলরাইট।' 

সেসময় আমেরিকায় বস্তিতে বস্তিতে নেশাদ্রব্য ও মাদকের অভয়ারণ্য তৈরি হয়েছিল। হতাশায় নিমজ্জিত, অপরাধে জড়ানো তরুণদের জন্য আশা ও সান্ত্বনার বাণী নিয়ে এসেছিল টুপাকের গান। এর বাইরে তার গানগুলোয় সবচেয়ে নিয়মিতভাবে এসেছে বস্তিতে বাস করা কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা। শুধু মানব-মানবীর ভালোবাসা বা ফুল-চাঁদ-তারা-পাখি নিয়ে গাওয়া গানের বাইরে টুপাকের গান তুলে ধরেছে ক্লেশ, শ্রম, রক্ত, ঘামের জীবন। বাংলা গানে যেমন 'জীবনমুখী' বলে গানের একটি ধারাকে চিহ্নিত করা হয়, র‍্যাপ গানের মাধ্যমে টুপাক সেভাবেই সামনে এনেছেন প্রান্তিক মানুষদের জীবনযাত্রা, দেখিয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর কীভাবে চলছে নিপীড়ন। মুখোশ খুলে দিয়েছেন সবরকম কর্তৃত্ববাদী নিপীড়কদের, কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন সে দেশের সরকার, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থাকে। 

'মি এগেইন্সট দ্য ওয়ার্ল্ড'- এ যেমন বলছেন, 'দ্য কোয়েশ্চেন আই ওয়ান্ডার ইজ আফটার ডেথ, আফটার মাই লাস্ট ব্রেথ/হোয়েন উইল আই ফাইনালি গেট টু রেস্ট? থ্রু দিস সাপ্রেশন/দে পানিশ দ্য পিপল দ্যাট আস্কিন কোয়েশ্চেন... দ্য ম্যাসেজ আই স্ট্রেস: টু মেক ইট স্টপ স্টাডি ইওর লেসনস/ডোন্ট সেটল ফর লেস- ইভেন আ জিনিয়াস আস্কস কোয়েশ্চেনস।' 

টুপাক তার গানে মানুষের না বলা কথা, তাদের নিপীড়িত জীবনের কথাই তুলে ধরেছেন। যেকোনো রকম মুক্তির জন্য নিরন্তর প্রয়োজন প্রশ্ন করে যাওয়া। যতদিন মানুষ প্রশ্ন করতে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত তার স্বাধীন হয়ে ওঠার, তার সত্ত্বার বিকাশের সম্ভাবনা থাকবে। টুপাক তার গানে গানে সেই মুক্তির পথেই এগিয়ে নিতে চেয়েছেন মানুষকে।

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka air turns unhealthy even before dry season

Dhaka air turns unhealthy even before dry season

With the dry season approaching, Dhaka city’s air quality has once again slipped to an unhealthy level, underscoring the inadequacy of the limited measures taken by the authorities to curb air pollution.

11h ago