রাষ্ট্রব্যবস্থা পুনর্গঠনে এক ডজন নতুন আইন

প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই সনদ সই শেষে জনগণের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন। ১৭ অক্টোবর ২০২৫। ছবি: পিআইডি

জুলাই সনদে প্রস্তাবিত ব্যাপক সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য অন্তত এক ডজন নতুন আইন প্রণয়ন ও বিদ্যমান আটটি আইন সংশোধনের প্রয়োজন হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ পরিচালনা করা ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা বলেন, পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে, সুশাসন ও জবাবদিহিতা বাড়াতে এবং বহুদিনের আইনি ঘাটতি দূর করতে এসব আইন প্রয়োজন।

দলগুলো রাষ্ট্রপতির ক্ষমা, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ, নির্বাচন কমিশনারদের আচরণবিধি, বিচার বিভাগের প্রশাসনিক স্বাধীনতা এবং স্বাধীন অপরাধ তদন্ত সংস্থা গঠনের জন্য আইন প্রণয়নে একমত হয়েছে।

তারা এ বিষয়েও একমত হয়েছে যে, যেসব সংস্কারের জন্য সাংবিধানিক পরিবর্তন প্রয়োজন নেই, সেগুলো অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যাবে।

ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং এর প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা—যাতে দেশ কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর খেয়ালখুশি মতো পরিচালিত না হয়।

নতুন আইন

সনদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি যেকোনো দণ্ড মাফ বা কমানোর ক্ষমতা রাখবেন, তবে এই প্রক্রিয়াটি নতুন আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত নীতিমালা অনুসারে হতে হবে এবং ভুক্তভোগী বা অভিযোগকারীর পরিবারের সম্মতি বাধ্যতামূলক হবে।

ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সনদে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনার, ন্যায়পাল ও দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইনে সংশোধনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

সনদ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনারদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি নতুন আইন ও আচরণবিধি প্রণয়ন করতে হবে এবং সংসদীয় কমিটি ও এর সদস্যদের বিশেষ ক্ষমতা নির্ধারণে আলাদা আইন প্রয়োজন।

সনদে সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় আইন প্রণয়নের প্রস্তাব রয়েছে, যার মাধ্যমে সুপ্রিমকোর্টের জন্য একটি আর্থিকভাবে স্বাধীন প্রশাসনিক সংস্থা গঠন করা হবে। এই সচিবালয় অধস্তন আদালতের প্রশাসনিক কার্যক্রম, বাজেট, বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি ও শৃঙ্খলা বিধি তদারকি করবে।

এ ছাড়া, রাজনৈতিক বা আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্তভাবে ফৌজদারি অপরাধ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন অপরাধ তদন্ত সংস্থা গঠনে স্বাধীন অপরাধ তদন্ত আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত মালিকানা গোপন রেখে দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধে একটি আইন প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে। এই আইনের আওতায় কোম্পানি, ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশনের প্রকৃত মালিকদের তথ্য সংরক্ষণ ও প্রকাশের একটি কাঠামো তৈরি করা হবে।

বৈধ উৎস ছাড়া আয়ের বৈধতা দেওয়ার চর্চা বন্ধ করতে আরেকটি নতুন আইন হবে, যা নিরপেক্ষ নিরীক্ষা নিশ্চিত করবে।

সনদে আরও প্রস্তাব করা হয়েছে, স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও রাষ্ট্রীয় বা আইনি ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে আইন করা হবে যাতে কেউ গোপন বা অঘোষিত সম্পদ সঞ্চয় করতে না পারে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এসব নতুন আইন সুশাসন নিশ্চিত করবে এবং সরকারের জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, 'এই আইনগুলো মূলত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত। এসব প্রতিষ্ঠানের কাজ করার কথা জনস্বার্থে, ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে নয়।'

বিদ্যমান আইন সংশোধন

তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ পর্যালোচনা ও সংশোধন করা হবে, যাতে নাগরিকরা সরকারি সেবাসংক্রান্ত তথ্য সহজে ও বাধাহীনভাবে পেতে পারেন।

এ ছাড়া, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে এই আইনের আওতায় আনা হবে বলে সনদে উল্লেখ করা হয়েছে।

নাগরিকদের সময়োপযোগী ও সহজে তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ১৯২৩ সালের গোপনীয়তা আইনও পর্যালোচনা ও সংশোধন করা হবে।

রাজনৈতিক ও নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও সততা বাড়াতে নির্বাচন-সংক্রান্ত আইনগুলো সংস্কার করা হবে। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আয়ের উৎস, অর্থায়ন ও ব্যয়ের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ্যে জানাতে হবে।

নির্বাচন কমিশন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সহায়তায় প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া আর্থিক তথ্যের সত্যতা যাচাই করবে এবং অসঙ্গতি পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

সব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মধ্যে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আয় ও সম্পদের বার্ষিক বিবরণী নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে। এই বিবরণীগুলো কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

কোনো ব্যক্তি দুর্নীতি বা অনিয়মে জড়িত থাকলে তাকে দলীয় পদে নিয়োগ বা নির্বাচনে প্রার্থী করার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে।

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর একটি ধারা বাতিল করা হবে, যার ফলে বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করতে কমিশনের আর সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না।

একই আইনের আরেকটি ধারা সংশোধন করে কমিশনারদের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে কমিয়ে চার বছর করা হবে।

২০০০ সালের আইনি সহায়তা আইন বাতিল করে আইনি সহায়তা ও মধ্যস্থতা সেবা অধ্যাদেশ জারি করা হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

5h ago