যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অগ্রগতি নেই, গাজার বিভিন্ন অংশে ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত

নুসেইরাত শিবিরের এই স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় ৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত হন। ছবি: রয়টার্স
নুসেইরাত শিবিরের এই স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় ৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত হন। ছবি: রয়টার্স

জাতিসংঘের একটি স্কুলে প্রাণঘাতী হামলা চালানোর পর আজ শুক্রবার ইসরায়েল গাজার অপর এক শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলা চালিয়েছে। গাজার সংঘাতের নবম মাসের শুরুতেই হামলার তীব্রতা বাড়াল ইসরায়েল।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় হাজারো মানুষ নিহত হয়েছেন, গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ অংশ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে এবং এর ২৪ লাখ জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই নিজ নিজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

যুদ্ধবিরতির আলোচনায় স্থবিরতা

গাজায় যুদ্ধবিরতির চার মধ্যস্থতাকারী। বাম থেকে ডানে সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস, মিশরের গোয়েন্দা প্রধান আব্বাস কামেল, মোসাদ প্রধান ডেভিড বারনিয়া ও কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহামেদ বিন আবদুলরাহমান আল-থানি। কোলাজ ছবি: এএফপি
গাজায় যুদ্ধবিরতির চার মধ্যস্থতাকারী। বাম থেকে ডানে সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস, মিশরের গোয়েন্দা প্রধান আব্বাস কামেল, মোসাদ প্রধান ডেভিড বারনিয়া ও কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহামেদ বিন আবদুলরাহমান আল-থানি। কোলাজ ছবি: এএফপি

নভেম্বরের পর থেকে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অগ্রগতি নেই বললেই চলে। সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপস্থাপন করা খসড়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের কিছু অংশ নিয়ে এখনো হামাস-ইসরায়েলের আপত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। 

বাইডেনের প্রস্তাবের আনুষ্ঠানিক জবাব এখনো দেয়নি হামাস। অপরদিকে, ইসরায়েল বলেছে যুদ্ধ অব্যাহত রেখেই আলোচনা চলবে।

হামাসের দাবি, সব জিম্মি মুক্তির আগে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চালু করতে হবে এবং সকল ইসরায়েলি সেনাকে গাজা ছেড়ে চলে যেতে হবে। এই দাবি মানতে অস্বীকার করে ইসরায়েল বলেছে, হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত তাদের 'যুদ্ধের লক্ষ্য' পূরণ হবে না।

মূলত এ বিষয়টি নিয়েই আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।

গাজার বিভিন্ন অংশ হামলা অব্যাহত

দেইর আল-বালাহ অঞ্চলে নিহতদের জানাজায় অংশ নিচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স (৬ জুন)
দেইর আল-বালাহ অঞ্চলে নিহতদের জানাজায় অংশ নিচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স (৬ জুন)

শুক্রবার গাজা উপত্যকার বিভিন্ন অংশে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। আল জাজিরা জানিয়েছে, এসব হামলার বেশিরভাগই ইসরায়েলের 'নিরাপদ এলাকা' হিসেবে ঘোষিত অবস্থানে সংঘটিত হয়েছে। 

এক দিন আগে নুসেইরাত ক্যাম্পের সেই স্কুলে হামলার পর এই শরণার্থী শিবিরে নতুন করে আজ কামানের গোলার আঘাত ও বিমান থেকে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা এএফপিকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

আল-আকসা হাসপাতালের এক সূত্র জানান, বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের একটি চিকিৎসাকেন্দ্রের কাছে অবস্থিত ঈসা পরিবারের বাসস্থানকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এই হামলায় অনেকেই আহত হন।

গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি ট্যাংক। ছবি: এএফপি (৬ জুন, ২০২৪)
গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি ট্যাংক। ছবি: এএফপি (৬ জুন, ২০২৪)

প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেন, দেইর আল-বালাহ অঞ্চলের পূর্ব অংশে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি, ইসরায়েলি সেনা পরিবহন থেকে বুরেইজ শিবিরের পূর্ব অংশেও গুলি চালানো হয়। এতে একটি সড়কের মোড়ে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।

গাজা সিটিতে আল-সালাম মসজিদের কাছে আসরাম পরিবারের বাসস্থানে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ব্যাপটিস্ট হাসপাতাল।

মাঘাজি শিবিরের ওয়াফাতি পরিবারের উপর হামলায় ছয় জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আল-আকসা হাসপাতালের এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসক এই তথ্য জানান।

দক্ষিণের রাফার আল-সুলতান মহল্লাকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলা চালিয়েছে। এই শহরের সূত্ররা এই তথ্য জানান।

সমুদ্রপথেও গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এএফপির সংবাদদাতা জানান, গাজা সিটির পশ্চিম দিক থেকে ইসরায়েলি যুদ্ধজাহাজ ফিশারম্যান'স পোর্ট এলাকার বাড়িগুলোর ওপর হামলা চালায়।

মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ অঞ্চলের আল-আকসা হাসপাতাল জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার নুসেইরাত শিবিরে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৭, যাদের মধ্যে নারী আর শিশুও আছে।

ইসরায়েল দাবি করেছে, তিন শ্রেণীকক্ষে লুকিয়ে থাকা নয় 'জঙ্গিকে' তাদের যুদ্ধবিমান হত্যা করেছে। সেখানে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের ৩০ যোদ্ধা লুকিয়ে ছিল বলেও তারা দাবি করে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এএফপির সর্বশেষ হিসাব মতে, এই হামলায় এক হাজার ১৯৪ জন নিহত হন। একইসঙ্গে ২৫১ জনকে জিম্মি করে হামাস। জিম্মিদের মধ্যে ১২০ জন এখনো গাজায় আছেন। ইসরায়েলের দাবি, ৪১ জিম্মি নিহত হয়েছেন।

এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে সেদিনই গাজার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ও নির্বিচার বিমানহামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরবর্তীতে স্থলবাহিনীও এতে যোগ দেয়। গত ৭ মাসে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা অন্তত ৩৬ হাজার ৬৫৪ ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা ৮৩ হাজারেরও বেশি। হতাহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Comments

The Daily Star  | English
Strategies we can employ in tariff talks with the US

US tariff talks: Bangladesh writes to USTR, seeking date

The negotiation team from Bangladesh will fly to America once the USTR fixes a date for the talks

10h ago