রাইসির মৃত্যুর পর যা হতে পারে ইরানে

পত্রিকায় ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুসংবাদ পড়ছেন এক ইরানি নাগরিক। ছবি: ডয়চে ভেলে/এএফপি
পত্রিকায় ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুসংবাদ পড়ছেন এক ইরানি নাগরিক। ছবি: ডয়চে ভেলে/এএফপি

ইরান যখন একাধিক ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার মুখে, তখনই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা গেলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।

রোববার আজারবাইজান সীমান্তে একটি বাঁধের উদ্বোধন করে রাইসি তেহরান ফিরছিলেন, তখনই তার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। কোন পরিস্থিতিতে এই দুর্ঘটনা হলো, তা এখনো স্পষ্ট হয়নি।

হামবুর্গের থিংকট্যাংক জার্মান ইন্সটিটিউট ফর গ্লোবাল অ্যান্ড এরিয়া স্টাডিজের ইরান বিশেষজ্ঞ সারা বাজোবান্দি বলেন,  'এখন এ বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের অনুমান ও অসমর্থিত প্রতিবেদন সবার সামনে আসতে থাকবে।'

তিনি আরও বলেন, 'এই দুর্ঘটনার কারণ যান্ত্রিক ত্রুটি হতে পারে, অন্তর্ঘাতও হতে পারে। এমন কী, এ ঘটনায় রাইসির রাজনৈতিক পরিধির মধ্যে থাকা যে কারো হাতও থাকতে পারে। কিছুই উড়িয়ে দেয়া যায় না।'

'ইরানের মানুষ চাইবে, এই দুর্ঘটনা নিয়ে আগামী দিনে আরো তথ্য সামনে আসুক', যোগ করেন সারা।

শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান শাসকদের কাছে শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখাই প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব পাবে।

মন্ত্রিসভা ইতোমধ্যে অঙ্গীকার করেছে, কোনো ধরনের বিঘ্ন ছাড়াই সরকার কাজ করে যাবে। মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা মানুষকে সেবার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাবেন।

ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব সামলাবেন। ইরানের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ৫০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে।

রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি মোখবারের নাম ঘোষণা করেন।

জার্মান ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি টাইসের গবেষক হামিদরেজা আজিজি বলেন, '৬৯ বছর বয়সী মোখবার শিয়া ধর্মীয় নেতাদের আস্থাভাজন। তার সঙ্গে ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) সম্পর্কও খুব ভালো। যার ফলে প্রশাসনে আইআরজিসির ভূমিকা আগের মতোই থাকবে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আইআরজিসির নিয়ন্ত্রণ আরো বাড়তে পারে।'

'নির্বাচনে চমক প্রত্যাশিত নয়'

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুখবার। ছবি: সংগৃহীত
ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুখবার। ছবি: সংগৃহীত

সারা বাজোবান্দি বলেন, '৫০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন হবে। এটা অনুমান করাই যায় যে এর মধ্যে কোনো চমক থাকবে না।'

এ মুহূর্তে ইরানে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ৫০ শতাংশ। নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া এবং অসংখ্য মানুষ আর্থিক কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।

২০২৩ সালে সরকার ৮৫৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে। ২০১৫ সালের পর এত বেশি মৃত্যুদণ্ড কখনো কার্যকর হয়নি।

বাজোবান্দি বলেন, 'রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে। যার ফলে আগামী নির্বাচন নিয়ে মানুষের উৎসাহ কম হতে পারে।'

তিনি জানান, 'মানুষ এই শাসকদের বিশ্বাস করে না। আর শাসক পরিবর্তনের আশাও তাদের নেই। অনেক নাগরিক মনে করেন, কে জিতবে তা ভোট হওয়ার আগেই নির্ধারিত হয়ে আছে। বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ভোটে জিতে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।'

আরেকটি বিতর্ক হতে পারে

আলি খামেনির ছেলে মোজতাবা খামেনি। ছবি: সংগৃহীত
আলি খামেনির ছেলে মোজতাবা খামেনি। ছবি: সংগৃহীত

রাইসির মৃত্যুর পর আরেকটি বিষয় সামনে আসতে পারে, তা হলো, সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনির উত্তরাধিকারী কে হবেন?

ইরান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যে দুইজনের নাম নিয়ে আলোচনা হতো, তার মধ্যে একজন ছিলেন রাইসি এবং অপরজন হলেন আলি খামেনির ছেলে ৫৫ বছর বয়সী মোজতাবা, যিনি পর্দার পিছন থেকে এতদিন প্রভাব বিস্তার করেছেন।

অনেকে মনে করেন, মোজতাবা সর্বোচ্চ নেতা হলে ইরানের মানুষের একটা বড় অংশ খুশি হবেন না। সাজাদপোর লিখেছেন,  'মোজতাবা খামেনি সর্বোচ্চ নেতা হলে বিক্ষোভ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে মোজতাবা পুরোপুরি রেভলিউশনারি গার্ডের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন।'

কিন্তু বাজোবান্দি বিশ্বাস করেন, 'নতুন করে ইরানে কোনো গণআন্দোলন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর অত্যন্ত কড়া হাতে বিক্ষোভ দমন করা হয়েছে। বিরোধীরা পুরোপুরি হতাশ হয়ে পড়েছেন।'

তিনি মনে করেন, 'অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের আমলেও বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না। তিনিও খামেনির নির্দেশ মেনে চলবেন। পরবর্তী প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Secretariat protest: Police file case against 1,200 over attacks, vandalism

At least 75 people were injured as clashes broke out at the Secretariat between law enforcers and HSC examinees

2h ago