নির্বাচনের পথে ট্রাম্পের যেসব বাধা

ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

পরপর তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে বেশ কিছু কারণে তার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাটা কঠিন হতে পারে।

আজ বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

এতে উল্লেখ করা হয়, ১ ঘণ্টার বেশি সময়ের বক্তৃতায় ট্রাম্প নিজের গুণগানের পাশাপাশি গত ২ বছরে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের 'ব্যর্থতাগুলো' তুলে ধরেন।

এতে আরও বলা হয়, ট্রাম্পের একদল অনুগত সমর্থক আছে। তিনি নির্দলীয় ভোটারদেরও আকৃষ্ট করতে পারেন। ৪ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও ট্রাম্পের এমন অনেক মিত্র আছেন যারা রিপাবলিকান পার্টিতে বেশ প্রভাবশালী।

তবে বক্তব্যে ট্রাম্পের নিজের দুর্বলতাগুলোও প্রকাশ পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।

বক্তব্যে ট্রাম্প গত ৮ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রাপ্তি নিয়ে কথা বলেছেন। তার সমর্থিত বেশ কয়েকজন প্রার্থীর পরাজয় প্রসঙ্গে সমালোচকদের জবাব দিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্প মনে করেন, এখন সময় লাখো জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করা। তবে অনেকে মনে করেন, ট্রাম্পের সামনে এমন সব বাধা আছে যার কারণে তার হোয়াইট হাউসের জন্য লড়াই খুব একটা সহজ হবে না।

প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড

বিবিসির প্রতিবেদন মতে, ট্রাম্প যখন প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তখন তিনি ছিলেন অনেকটা 'সাদা কাগজের' মতো। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি কতটা সাফল্যের সঙ্গে দেশ চালাতে পারবেন তা নিয়ে ভোটারদের কোনো ধারণা ছিল না। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে তারা তাকে ভোট দিয়েছিলেন।

কর কমানো ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সংস্কারসহ ট্রাম্পের সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতাও অনেক। বিশেষ করে, ডেমোক্র্যাটদের স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার বাতিলের ও বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারা এখন তার নিজ দলেই আলোচনার বিষয়।

এ ছাড়াও, করোনা মহামারি মোকাবিলায় তার নেতিবাচক ভূমিকার সমালোচনা দলমত নির্বিশেষে সবার মুখেই।

৬ জানুয়ারির সহিংস ঘটনা

প্রতিবেদন অনুসারে, নির্বাচনে পরাজয়ের পর ক্যাপটলে ট্রাম্প সমর্থকদের সহিংস হামলার কথা ভোটাররা সহজেই ভুলে যাবেন বলে মনে হয় না।

মধ্যবর্তী নির্বাচনেও বিষয়টি ওঠায় তা ভোটারদের প্রভাবিত করেছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

রিপাবলিকান পার্টির ট্রাম্পপন্থি প্রার্থীদের মধ্যে যারা ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলেন তাদের অনেকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে জিততে পারেননি।

আইনি সমস্যা

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার তদন্ত চলমান থাকায় অনেকের আশঙ্কা এটি তার নির্বাচনে প্রার্থিতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এই মুহূর্তে ট্রাম্পকে জর্জিয়ার নির্বাচনে ভোট কারচুপি, নিউইয়র্কে ব্যবসায় জালিয়াতি, যৌন হয়রানি, ক্যাপিটলে হামলা ও ক্ষমতা হস্তান্তরের পর 'গোপন নথি'র অপব্যবহার নিয়ে মামলার মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

এর কোনো একটির জন্য ট্রাম্পকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হলে তা তার নির্বাচনী প্রচারণায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

বিচারক ট্রাম্পকে জরিমানা বা কারাদণ্ড দিলে তা তার জন্য আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

দলে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী

আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতা পেতে ট্রাম্পকে তার দলে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে। তাদের অনেকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে। আবার অনেকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।

বিজয়ীদের তালিকায় থাকা ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টি এবার ট্রাম্পের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। অনেকে মনে করেছেন রিপাবলিকান পার্টির এই নেতার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ দিনে দিনে উজ্জ্বল হচ্ছে।

তবে রন ডিস্যান্টি জাতীয় পর্যায়ে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন তা এখনো অনিশ্চিত। এমনকি, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কিনা তাও ঘোষণা দেননি।

তবে, রিপাবলিকান দলে ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক থাকার পাশাপাশি কট্টর বিরোধীও আছেন।

ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা হ্রাস

বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ৮ বছর আগে মার্কিন ভোটারদের কাছে ট্রাম্পকে নিয়ে যে আগ্রহ ছিল তাতে ভাটা পড়েছে। প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য বিশেষ করে, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া ও নিউ হ্যাম্পশায়ারে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমেছে।

এসব অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ফ্লোরিডা ও জর্জিয়ায় গভর্নর রন ডিস্যান্টি প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের তুলনায় যথাক্রমে ২৬ ও ২০ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। আগের তুলনায় এই ২ অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমেছে।

এ ছাড়াও, নিউ হ্যাম্পশায়ারে মাত্র ৩০ শতাংশ ভোটার বলেছেন যে তারা ট্রাম্পকে আবারও প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান।

বাধা হতে পারে বয়সও

২০২৪ সালের নির্বাচনে জিতে ট্রাম্প যখন শপথ নিবেন তখন তার বয়স হবে ৭৮ বছর। এমন বয়সেই জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। ট্রাম্প যদি আবার প্রেসিডেন্ট হন তাহলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় প্রবীণ প্রেসিডেন্ট।

এমন বয়সে ট্রাম্প যে দেশব্যাপী জোরদার প্রচারণা চালাতে পারবেন এর নিশ্চয়তা নেই।

Comments

The Daily Star  | English

Private investment sinks to five-year low

Private investment as a percentage of the gross domestic product has slumped to its lowest level in five years, stoking fears over waning business confidence and a slowdown in job creation.

11h ago