হতাশায় মোড়ানো ঘটনাবহুল সমাপ্তি

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

এভিন লুইসের ব্যাটে আড়াইশর দিকে যাচ্ছিল উইন্ডিজ। দারুণ বোলিং করে তাদের দুশোর নিচে আটকে রেখেছিলেন সাকিব আল হাসানরা। রান তাড়ায় আবারও বিস্ফোরক শুরু পাইয়ে দিয়েছিলেন লিটন দাস। কিন্তু সব ছাপিয়ে গেল আম্পায়ার তানবির আহমেদের ভুল, খেলা বন্ধ করে ক্যারিবিয়ানদের প্রতিবাদ। অনাকাঙ্ক্ষিত বিরতির পর পথ হারিয়ে ডুবেছে বাংলাদেশ।

শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঘটনা বহুল ম্যাচে ১৯০ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল উইন্ডিজ। ১৪০ রানে অল আউট হয়ে বাংলাদেশ ম্যাচ হেরেছে ৫০ রান। এই জয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতে সফর শেষ করল সফরকারীরা। এর আগে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশই। প্রথমবার সব সংস্করণে কোন দলকে হারানোর সুযোগও ছিল সামনে। কিন্তু শেষটা হলো হতাশায় মুড়ানো।

বাংলাদেশের ইনিংস ভাগ করা যেতে পারে আম্পায়ারিং বিতর্কের আগে ও পরে। ১৯১ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করেও উড়ন্ত শুরু পাইয়ে দিয়েছিলেন লিটন দাস। রান আউটে তামিম ইকবাল কাটা পড়লেও ছন্দে থাকা লিটনকে নিয়ে বড় আশাই দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আম্পায়ার তানবির আহমেদের ভুলে তার বেঁচে যাওয়া এবং এর রেশে আট মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর খেই হারায় বাংলাদেশের ইনিংস। ভুল আম্পায়ারিংয়ের কারণে অনেকক্ষণ বচসা করে বাড়তি আগুন নিয়ে ঝাঁপায় ক্যারিবিয়ানরা।

মনোযোগ নড়ে যাওয়ার কারণেই হয়ত টপাটপ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। ৪ ওভারে ১ উইকেটে ৬৫ থেকে বাংলাদেশ একশো রানের ভেতরে হারিয়ে ফেলে ৮ উইকেট। কে কীভাবে আউট হলেন তার বর্ণনাই বরং  বিরক্তিকর ঠেকতে পারে। মিনিট বিশেক আগের উত্তাল গ্যালারি মুহূর্তেই হয়ে যায় স্তব্ধ। ব্যাটসম্যানদের ভুলের হতাশা নাকি স্বদেশী আম্পায়ারের দৃষ্টিকটু ভুল নিয়ে হাহাকার হবে, দর্শকদেরও হয়ত ভেবে কুল পাওয়ার উপায় ছিল না।

সাকিব, মুশফিক আর সৌম্য ফেরেন দুই অঙ্কের আগেই। ১১ করে থামেন মাহমুদউল্লাহ। আরিফুল হকও করেন হতাশ। যার আউট নিয়ে এত হৈচৈ সেই লিটনই পরেও আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। ২৫ বলে ৩ চার আর ৩ ছক্কায় ৪৩ করে তিনি ফেরার পর আর জেতার উপায় ছিল না। পরে ব্যবধান কমিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ আর আবু হায়দার রনি।

এর আগে টস জিতে উইন্ডিজকে ব্যাট করতে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সিদ্ধান্তটা  ভুল হয়ে গেল কিনা খানিক পরই এমন মনে হওয়ার যোগাড়। এভিন লুইস আর শেই হোপ মিলে যে শুরু করলেন দানবীয় তাণ্ডব। ৩ ওভার ১ বলেই দলের পঞ্চাশ। বোলারদের অবস্থা দফারফা। ঝড়টা বেশি টের পেয়েছেন রনি। তার এক ওভার থেকেই চার ছক্কায় ২৭ তুললেন লুইস। খানিক পর ৪৯ রানে লুইসের সহজ ক্যাচও ছাড়েন রনি। বাড়ছিল আফসোস।

বাংলাদেশ সফরে রঙিন পোশাকে উইন্ডিজের সবচেয়ে বড় ভরসার নাম হোপও মারতে থাকেন তেড়েফুঁড়ে। পাওয়ার প্লেকে রান বন্যায় ভাসিয়ে ছুটছিলেন তারা। অধিনায়ক সাকিব এসে হোপকে ফেরালে আসে ব্রেক থ্রো। ততক্ষণে অবশ্য মাত্র ৫ ওভারে ওদের বোর্ডে উঠে গেছে ৭৬ রান।

হোপ ফেরার পরও চালিয়ে যান লুইস। মাঝে কেমো পলকে মোস্তাফিজ ফেরালেও রান বাড়ছিল এক্সপ্রেস গতিতে।

৬ চার আর ৮ ছক্কায় লুইস পৌঁছে গিয়েছিলেন সেঞ্চুরির কাছাকাছি। দলের ভীষণ নাজুক সময়ে এসে মাহমুদউল্লাহ করেন বাজিমাত। ৮৯ করা লুইসকে বোল্ড করার পরের বলেই শেমরন হেটমায়ারকে ফিরিয়ে দেন এলবডব্লিও করে। মুহুর্তেই যেন ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। পরে মাহমুদউল্লাহ আউট করেন রভম্যান পাওয়েলকেও।

লুইসদের গড়ে দেওয়া ভিত ধরে দলকে টানছিল নিকোলাস পুরান, অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েটও ছিলেন সঙ্গে। এক ওভারেই দুজনকে ফিরিয়ে ক্যারিবিয়ানদের ডানা ভেঙ্গে দেন মোস্তাফিজ।

শুরুটা করেছিলেন সাকিব, শেষটাও মুড়েন তিনি। নিজের শেষ ওভারে সাকিবের জোড়া আঘাতে দুশো’র স্বপ্ন ভেস্তে যায় ক্যারিবিয়ানদের। লুইসের ঝড়ের সময় মনে হচ্ছিল তাদের রান অনায়াসে ছাড়াবে আড়াইশ। দারুণভাবে বাংলাদেশের ফিরে আসায় থামতে নয় ক্যারিবিয়ানদের। প্রথম ১০ ওভারে উইন্ডিজ তুলে ফেলেছিল ১২৩। পরের ৯ ওভার ২ বলে এল মাত্র ৬৭ রান। এই মোমেন্টাম নিয়েই ম্যাচটা জিতেই শেষ করতে পারত বাংলাদেশ। আম্পায়ারিং বিতর্কের পর এলোমেলো হয়ে পড়া বাংলাদেশের ব্যাটিং কেবল যুগিয়েছে হতাশা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

উইন্ডিজ:  ১৯ ওভার ২ বলে ১৯০ (লুইস ৮৯, হোপ ২৩, পল ২, পাওয়েল ১৯, হেটমায়ার ০, পুরান ২৯, ব্র্যাথওয়েট ৮, রাদারফোর্ড ২, অ্যালান ৮,  কটরেল ২, টমাস ০*  ; মোস্তাফিজ ৩/৩৩, সাইফুদ্দিন ০/৩৬, রনি ০/৩৯, মিরাজ ০/২৬, সাকিব ৩/৩৭ , মাহমুদউল্লাহ ৩/১৮ )

বাংলাদেশ:  ১৭ ওভারে ১৪০ (তামিম ৮, লিটন ৪৩,  সৌম্য ৯, সাকিব, মুশফিক ১, মাহমুদউল্লাহ ১১, মিরাজ ১৯, আরিফুল ০, সাইফুদ্দিন ৫, আবু হায়দার ২২*, মোস্তাফিজ ৭ ; কটরেল ১/৩২, টমাস ০/৫৬ , অ্যালান ২/১৯, পল ৫/১৫, ব্র্যাথওয়েট )

ফল: উইন্ডিজ ৫০ রানে জয়ী।

 

Comments

The Daily Star  | English
honor smartphone inside

How to build a smartphone

Smartphones feel inevitable in the hand, yet each one begins as a set of drawings, components and hypotheses. The journey from concept to finished device is a carefully sequenced collaboration between design labs, supplier networks and high-throughput assembly lines. In leading electronics hubs across Asia, that journey can take as little as days once a design is frozen and parts are on site.

3h ago